English

29 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

গুণী-মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক ও মহৎপ্রাণ এক মানুষ মাহফুজুর রহমান খান

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

গুণি-মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক, নায়ক ও প্রযোজক মাহফুজুর রহমান খান-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। প্রয়াত এই গুণী মানুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মাহফুজুর রহমান খান ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে, ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাকিম ইরতিজা-উর-রহমান খান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পৈতৃক নিবাস লালবাগের চকবাজারস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান খান রোডে। রোডটির নাম তাঁর দাদা হাকিম হাবিবুর রহমান খান-এর নামানুসারে নামকরণ করা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন সবার বড়। তাঁর চাচা, ই আর খান (ইরতিফা-উর-রহমান খান) একজন খ্যাতনামা পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ভাতৃদ্বয় এহতেশাম ও মুস্তাফিজ ছিলেন তাঁর ফুফাত ভাই।
তিনি লেখাপড়া করেছেন- ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ-এ।
স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে তিনি চিত্রগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁর বাবার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে চিত্রগ্রহণে হাতেখড়ি হয়। চিত্রগ্রহণ শেখার উদ্দেশ্যে তিনি প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক জহির রায়হান নির্মাণাধীন ‘লেট দেয়ার বি লাইট’-এর সেটে গিয়েছিলেন।
এছাড়া মাহফুজুর রহমান খান, আরেক প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আব্দুল লতিফ বাচ্চু’র অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। একক চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিটি। তিনি আরো যেসব চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছন তাঁরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- আমার জন্মভূমি, মেহেরবানু, হারানো মানিক, চাষীর মেয়ে, সখি তুমি কার, জোকার, গাঁয়ের ছেলে, অপন ভাই, প্রিন্সেস টিনা খান, ভাই ভাই, জীবন মৃত্যু, মহানায়ক, দোস্তী, ঝুমকা, সুখে থাকো, বদনাম, কালো গোলাপ, নির্দোষ, তালাক, তওবা, সৎভাই, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, তিন কন্যা, ঢাকা-৮৬, ভেজা চোখ, মরণের পরে, অচেনা, অন্ধ বিশ্বাস, ত্যাগ, অন্তরে অন্তরে, পোকা মাকড়ের ঘর বসতি, আনন্দ অশ্রু, পাহারাদার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, মেঘলা আকাশ, চন্দ্রকথা, শঙ্খনাদ, এক খণ্ড জমি, হাজার বছর ধরে, নন্দিত নরকে, স্বপ্নডানায়, চন্দ্রগ্রহণ, কি যাদু করিলা, আমার আছে জল, বৃত্তের বাইরে, ঘেটুপুত্র কমলা, জীবনঢুলী, এক কাপ চা, ৭১-এর মা জননী, ৭১-এর ক্ষুদিরাম, পদ্ম পাতার জল, পৌষ মাসের পিরীত প্রভৃতি।
ক্যামেরার যাদুকর মাহফুজুর রহমান খান দশ-দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। যেসব ছবি’র জন্য তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন- অভিযান (১৯৮৪), সহযাত্রী (১৯৮৭), পোকামাকড়ের ঘরবসতি(১৯৯৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারি (২০০০), হাজার বছর ধরে (২০০৫), আমার আছে জল (২০০৮), বৃত্তের বাইরে (২০০৪), ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২), পদ্মপাতার জল (২০১৫)।
এছাড়াও তিনি অাটবার বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার ও কয়েকবার প্রযোজক সমিতির পুরস্কার এবং একবার বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।
মাহফুজুর রহমান খান এক সময় কয়েকটি চলচ্চিত্রে, কবরী ও শাবানা’দের মতো জনপ্রিয় নায়িকাদের বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। তিনি যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন- আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ (১৯৭৩), মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘আলো ছায়া’ (১৯৭৪), নুর-উল-আলম পরিচালিত ‘চলো ঘর বাঁধি’ (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘দাবি'(১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত ‘একালের নায়ক’ (১৯৭৫)।
মাহফুজুর রহমান খান- নীতিবান, দুর্নাম, সম্মান, কৈফিয়ত’সহ কয়েকটি ছবিও প্রযোজনা করেছেন। তাঁর প্রযোজনা সংস্থার নাম ছিল, দিশা ইন্টারন্যাশনাল।
ব্যক্তিজীবনে মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে, ড. নিরাফাত আলম শিপ্রা’কে বিয়ে করেন। শিপ্রা দুরারোগ্য ক্যানসারব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। দাম্পত্য জীবনে তারা নিঃসন্তান ছিলেন।
গুণি-মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক ও মহৎপ্রাণ একজন মানুষ ছিলেন, মাহফুজুর রহমান খান। ছিলেন একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক। চলচ্চিত্রগ্রাহক হিসেবে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন তিনি। সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাঁর চিত্রায়িত চলচ্চিত্রে। তাঁর ধ্রুপদী ক্যামেরার কাজের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন সেরা চিত্রগ্রাহকের সুনাম, অধিষ্ঠিত হয়েছেন খ্যাতির শীর্ষ আসনে।
দৃষ্টিনন্দন চিত্রগ্রাহনের কুশলী কারিগর মাহফুজুর রহমান খান, তাঁর ক্যারিয়ারের প্রায় সব ছবিই দর্শক নন্দিত হয়েছে।
চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাঁর মতো এমন গুণী একজন চিত্রগ্রাহের শুন্যতা অপূরণীয়।
প্রগতিশীল, আধুনিক চিন্তা-চেতনার এক মহিরূহ চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব, মাহফুজুর রহমান খান। সদালাপি, নিপাট ভদ্রলোক, অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। সদ্ভাব-সদ্ব্যবহার ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সদা হাসি-খুশি এবং প্রাণোজ্জল, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অতি প্রিয় ভালোবাসার মানুষ ছিলেন তিনি।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী, বরেণ্য চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খানকে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিবার চিরদিনই স্মরণ করবে, শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন