English

30 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

চিত্রনায়িকা সুলতানা জামান এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

চিত্রনায়িকা সুলতানা জামান-এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১২ সালের ২০ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেত্রীর প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

সুলতানা জামান ১৯৪০ সালের ১০ আগস্ট, নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ আবদুর রাজ্জাক ছিলেন নাটোরের একজন জোতদার, মা সৈয়দা রহিমা খাতুন। তাঁর পারিবারিক নাম মোসাম্মৎ হোসনে আরা শরিফা বেগম। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই এবং ছয় বোন। তিনি নাটোর গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

সুলতানা জামান ১৯৫৮ সালে, কিউ এম জামানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিউ এম জামান চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি)-এর প্রথম চিত্রগ্রাহক ছিলেন। তাছাড়া তিনি প্রথম বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর চিত্রগ্রাহক ।

সুলতানা জামানের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর বিয়ের পর। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট এক অনুষ্ঠানে পরিচালক মহীউদ্দিন তাঁকে দেখে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আহবান জানান। নায়িকা হিসেবে তাঁর প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র মহীউদ্দিন পরিচালিত ‘মাটির পাহাড়’ মুক্তিপায় ১৯৫৯ সালে। এই ছবিতে তিনি ‘রাজিয়া’ নামে অভিনয় করেন এবং ‘জোয়ার এলো’ চলচ্চিত্রে ‘মিনা জামান’ নামে অভিনয় করেন তিনি। এখানে উল্লেখ্য তাঁর ডাক নাম ছিল ‘মিনা’। পরবর্তিতে, খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘অনেক দিনের চেনা’ ছবিতে তাঁর নাম বদলে হয়ে যান ‘সুলতানা জামান’। এবং এই নামেই তিনি পরবর্তিতে বিখ্যাত হন।

তাঁর অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে- চান্দা, সোনার কাজল, সাতরং, জানাজানি, মালা, উজালা, আবার বনবাসে রূপবান, পয়ুরপঙ্খি, জংলী ফুল, সপ্তডিঙ্গা, নতুন দিগন্ত, মনের মত বউ, ভানুমতি, দাসী, রাজকুমারী চন্দ্রবান, রূপকুমারী, মিশর কুমারী, নয়নমনি, জাদুর বাঁশি, নিশান, অনুভব, অগ্নিশিখা, তৃষ্ণা, মা প্রভৃতি। ১৯৭৮ সালের পর, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি অভিনয় থেকে দূরে থাকেন।

সুলতানা জামান ‘ভানুমতী’ ও ‘ছদ্মবেশী’ নামে দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। লেখালেখিও করেছেন তিনি, ‘সাগরের নীল চোখ’ নামে তাঁর একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও তিনি বেতারের নাটকে অভিনয় এবং তখনকার সময়ের বহুল জনপ্রিয় ’ছায়াছন্দ’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতেন।

সুলতানা জামান এদেশের প্রথম ‘আর্টিস্ট এসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং এর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি পাকিস্তান এ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের মেম্বারও ছিলেন।

নিজের বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক সম্মাননা এবং পুরস্কার, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চিত্রাকাশ পুরস্কার, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগার চলচ্চিত্র পুরস্কার, দেশীয় চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা-২০১০ এবং ২০১১ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক পুরস্কার।

বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে তাঁকে নিয়ে নির্মাণ করেছে ‘সুলতানা জামানের জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র।

সুলতানা জামান মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত আছেন। কিউ এম জামান-সুলতানা জামান দম্পতীর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একসময়ের খ্যাতিমান ও অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ছিলেন সুলতানা জামান। এ দেশের চলচ্চিত্রের ঊষালগ্নে যে কয়জন অভিনেত্রীর পদচারণায় মুখরিত ছিল আমাদের চলচ্চিত্রজগত, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম চিত্রনায়িকা। তিনি তাঁর প্রতিভা ও জনপ্রিয়তার দ্যুতি ছড়িয়েছেন তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তান জুঁড়ে।

আমাদের দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে বাণিজ্যিক ও শৈল্পিকভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে, সুলতানা জামান তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। সুলতানা জামানদের মতো প্রতিভাময়ী ও গুণী অভিনেত্রীদের হাত ধরেই পরবর্তিতে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প দৃঢ় ভিতের উপর দাড়িয়েছে, হয়েছে জৌলুশময়।

অভিনেত্রী সুলতানা জামান শারীরিকভাবে চলে গেছেন আমাদের মাঝ থেকে, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কর্ম ও জীবন। যতদিন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প বেঁচে থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন তিনি, তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে।

 

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন