English

39 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

ফিরোজা বেগম: প্রথিতযশা কন্ঠশিল্পী, নজরুলসঙ্গীত সম্রাজ্ঞী

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথিতযশা কন্ঠশিল্পী, নজরুলসঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ফিরোজা বেগম-এর আজ ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
তিনি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। প্রয়াত এই গুণি কন্ঠশিল্পীর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ফিরোজা বেগম ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুলাই, গোপালগঞ্জ জেলার রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা।
শৈশব থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ দেখা যায়। বাড়িতে কলের গান শুনে শুনে তিনি নিজে নিজে গান গাওয়া শুরু করেন। মাঝে মাঝে ঘরোয়া মজলিসে গান শুনিয়ে প্রসংশাও পেতেন।
মাত্র দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর কাছ থেকে সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন।
পরে তিনি গান শিখেছিলেন চিত্ত রায় এবং কমল দাশগুপ্তের কাছে। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন পঙ্কজ মল্লিকের কাছে। অন্যদিকে লোকসঙ্গীতের তালিম নেন আব্বাসউদ্দিন এবং পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কাছে।
ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। এর কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে তাঁর উর্দু গানের রেকর্ড বের হয়েছিল।
কাজী নজরুল ইসলামের গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে।
কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুলসঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
১৯৫৪ থেকে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন ফিরোজা বেগম। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে, প্রখ্যাত সুরকার-গীতিকার কন্ঠশিল্পী কমল দাশ গুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা ঢাকায় ফিরে আসেন। এ দম্পতির তিন সন্তান- তাহসিন, হামীন ও শাফীন। হামিন ও শাফিন দু’জনই ব্যান্ডসঙ্গীত শিল্পী।
জানা যায় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের ‘হরফ প্রকাশনী’ থেকে তাঁর প্রথম স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। পরবর্তিতে বাংলা একাডেমী থেকে ৩টি স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নজরুল একাডেমীকে ৫০ টি এবং বইঘরকে ১০০টি গানের স্বরলিপি প্রদান করেন ফিরোজা বেগম । নজরুল সংগীতের বাণী ও সুরের সত্যায়ন এবং স্বরলিপির শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য সরকার কর্তৃক ‘নজরুলসংগীত স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদ’ গঠিত হলে, তাঁর সভানেত্রী হন তিনি।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর গাওয়া ‘শাওন রাতে যদি’র রেকর্ড এক সপ্তাহের মধ্যে দুইলাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়। এজন্য জাপানের সনি কর্পোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সিবিএস তাঁকে গোল্ড ডিক্স দিয়ে সম্মানিত করে। ঢাকা রেডিও ও ইসলামাবাদ রেডিওর উদ্বোধন হয়, ফিরোজা বেগম-এর গাওয়া গানের মধ্য দিয়ে।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় আমন্ত্রীত, ‘বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলন মঞ্চে’ কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী ও সহধর্মিণী হিসেবে তিনি ছিলেন প্রধান শিল্পী। সেই অনুষ্ঠানে তাদের দ্বৈতসঙ্গীত পরিবেশন সকল শ্রোতা-দর্শকদেরকে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল। তাঁরা দু’জন হয়েছিলেন প্রসংশিত ও সম্মানিত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিরোজা বেগম, ৩৮০টিরও বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও আধুনিক, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের গানে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।
সোনালী আকাশ, কেন এমন হয়, দুঃখিনী জোহরা’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে নেপথ্য কন্ঠ দিয়েছেন ফিরোজা বেগম।
সঙ্গীতে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ পেয়েছেন রাস্ট্রীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যারমধ্যে আছে- ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার), নজরুল একাডেমী পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার-২০১১, এবং ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ‘বঙ্গ সম্মান’ পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অনন্য এক নাম ফিরোজা বেগম। আধুনিক গান, লোকসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, হাম-নাদ, পল্লীগীতিসহ সঙ্গীতের সকল শাখায় তাঁর ছিল সফল পদচারণা ও জনপ্রিয়তা । তবে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন নজরুলসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। তিনি নিজে কাজী নজরুল ইসলামের কাছে গান শিখেছেন, তাঁকে গান শুনিয়েছেন। কাজী নজরুল ছিলেন তাঁর গানের মুগ্ধশ্রোতা। যখন কবি ভীষণ অসুস্থ, বোধশক্তিহীন, তখনও ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে নিজের লেখা গান শুনে কবির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত। চোখে-মুখে যেনো ফুটে উঠতো সৃষ্টি সুখের উল্লাস। কথিত আছে যে, বেতারে তাঁর গান শুনে শুনে সবার মাঝে নজরুলসংগীত সম্পর্কে নতুনভাবে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। অসংখ্য নজরুলসংগীত যেমন গেয়েছেন তেমনই তিনি নজরুলসংগীতের সাধনায় নিমগ্ন থেকেছেন আজীবন। নজরুলসংগীতের, সুর তাল লয় নিয়ে গবেষণা করেছেন, শুদ্ধ নজরুলসংগীতকে আগামী দিনের জন্য, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছেন। প্রচণ্ড মেধাবী প্রতিভাবান কন্ঠশিল্পী ছিলেন ফিরোজা বেগম। তাঁর নিরন্তর সঙ্গীতসাধনা আমাদের সঙ্গীতজগতকে আলোকিত করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। নজরুলসঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী, কিংবদন্তী কন্ঠশিল্পী, আমাদের বাংলা গানের মহিরূহ ব্যক্তিত্ব ফিরোজা বেগম, অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন কর্মের মধ্যদিয়ে, সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে।
(তথ্যসূত্র ও ছবি- ইন্টারনেট থেকে নেয়া)

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন