English

24 C
Dhaka
বুধবার, মে ৮, ২০২৪
- Advertisement -

সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের প্রয়াণ দিবস আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: আলমগীর কবির। বীর মুক্তিযুদ্ধা, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্য-সংলাপ রচয়িতা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক শিক্ষক। এদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্রবিষয়ক শিক্ষার সূচনা হয়েছে, এই ‘আলমগীর কবির’ এর হাত ধরে।

আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন, এই সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার। বৃটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের- ‘বাংলাদেশের সেরা দশ চলচ্চিত্র’ তালিকায়, তাঁর নির্মিত তিনটি চলচ্চিত্র স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প-সাংস্কৃতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব আলমগীর কবির আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ও ক্যামেরা হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজি সংবাদ বিভাগের প্রধান ছিলেন।

বাংলাদেশের শিল্প-সাংস্কৃতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের প্রয়াণ দিবস আজ । তিনি ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারী, নগরবাড়ী ফেরিঘাটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫১ বছর।

প্রয়াণ দিবস-এ, প্রয়াত এই গুণী চলচ্চিত্রব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত প্রার্থনা করি।

Advertisements

আলমগীর কবির ১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর, রাঙ্গামাটিতে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পৈতৃক বাসস্থান, বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলায়। তিনি শিক্ষা জীবন শুরু করেন হুঘলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে। ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪-তে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণের পরে, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড চলে যান। এই সময়ে তিনি ইংগনমার বার্গম্যানের ‘সেভেনথ সিল’ চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকবার দেখেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ সময়ে চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাস, চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং কলাশাস্ত্রের উপর বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি।

১৯৬৬ সালে, আলমগীর কবির দেশে ফিরে আসেন। বামপন্থী আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে আয়ূব সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে, তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর পেশাজীবন শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি লাভ করেন।

১৯৭১-এ স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর সময়ে তিনি স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজি বিভাগে প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তিনি নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেন। এ সময় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তাঁর পরিচালক জীবনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।।

আলমগীর কবির তাঁর দেড়যুগের চলচ্চিত্র জীবনে সর্বমোট সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ছবিগুলো হলো- ধীরে বহে মেঘনা, সূর্য কন্যা, সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, মোহনা, পরিণীতা, মহানায়ক।

তিনি যেসব স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন সেগুলো হলো- লিবারেশন ফাইটার্স, প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ, কালচার ইন বাংলাদেশ, সুফিয়া, অমূল্য ধন, ভোর হলো দোর খোল, আমরা দু’জন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, শিল্পাচার্য জয়নুল, মনিকাঞ্চন ও চোরাস্রোত।

দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবির যেসব পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তারমধ্যে- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ পরিচালক- সূর্য কন্যা, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার – সূর্য কন্যা, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- সীমানা পেরিয়ে, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা- সীমানা পেরিয়ে, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র- পরিণীতা।

Advertisements

শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাঁকে।

এছাড়াও তিনি সিনে জার্নালিস্ট পুরস্কার, জহির রায়হান উত্তরণ চলচ্চিত্র পুরস্কার, সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আলমগীর কবির শারীরিকভাবে চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর কর্ম ও জীবন। তাঁর চিন্তা-চেতনা, তাঁর আদর্শ।

চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্টরা যতবেশী আলমগীর কবিরের মতো কৃতিমান ব্যক্তিত্ব তথা মানুষকে অনুসরণ করবেন এবং তাঁর কর্ম নিয়ে চর্চা করবেন, ততবেশী সমৃদ্ধ হবে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে আলমগীর কবিরের অবদান অবশ্য অবশ্যই স্মরণ যোগ্য।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন