এ কে আজাদ: বারী সিদ্দিকী। বংশীবাদক ও কন্ঠশিল্পী। প্রতিভান একজন গুণি কন্ঠশিল্পী বারী সিদ্দিকী। জনপ্রিয় এই কন্ঠশিল্পী তাঁর দরদী কণ্ঠের পাগল করা গানে ও বাঁশীর সুরে বিমোহিত করে গেছেন লক্ষ কোটি দর্শকদের।
জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী’র অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
প্রয়াত এই গুণি শিল্পীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
বারী সিদ্দিকী (আবদুল বারী সিদ্দিকী) ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর, নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ।
শৈশব থেকেই গান শেখা শুরু করেন বারী সিদ্দিকী, তাঁর প্রথম গুরু নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্ত।
পরবর্তিতে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ’সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর উপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন তিনি।
বারী সিদ্দিকী নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
মূলত বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী ১৯৯৫ সালে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করতেন। তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে- শুয়া চান পাখি.., আমার গায়ে যত দুঃখ সয়…, সাড়ে তিন হাত কবর.., পুবালি বাতাসে…, তুমি থাকো কারাগারে.., রজনী.., ওগো ভাবিজান নাউ বাওয়া.., মানুষ ধরো মানুষ ভজো.. প্রভৃতি।
এসব বিরহ-বিচ্ছেদের মর্মভেদী গানের মধ্য দিয়ে অতিঅল্প দিনেই সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন বারী সিদ্দিকী।
১৯৯৯ সালে, জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
বারী সিদ্দিকী বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ও গানের কথা লিখেছেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বারী সিদ্দিকী যেসব চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন তারমধ্যে– শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০), রূপকথার গল্প (২০০৭), নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ (২০১২), ও আমার দেশের মাটি (২০১২), মাটির পিঞ্জিরা (২০১৩) অন্যতম।
এমনকি তিনি অভিনয়ও করেছেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের নাম ‘মাটির পিঞ্জিরা’। ‘পাগলা ঘোড়া’ নামে একটি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।
কৃতিমান সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী তার শ্রুতিমধুর গানের মাধ্যমে চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন আমাদের সঙ্গীতভূবনে।
