ডা. শওকত কবীর: রেটিনাজনিত কারণে চোখে কম দেখার বিষয়টি রোগীদের বুঝতে পারা বেশ কঠিন কাজ। রেটিনা বিশেষজ্ঞ ছাড়া রোগটি অন্য কেউ সরাসরি ধরতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস চশমা দ্বারা উন্নতি না হলে, আঘাতজনিত কারণে চোখে কম দেখলে, চোখের সামনে কালো কিছু ভাসতে থাকলে, চোখের সামনে আলোর ঝলকানো দেখা দিলে, চোখে কালো পর্দার মতো কিছু পড়তে দেখলে এবং কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ করে কমে গেলে রেটিনাজনিত চোখের সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
রেটিনার রোগ বয়স ও কারণভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কোনো কোনো রোগ জন্মের কিছুদিনের মধ্যে চিকিৎসা না করালে সারাজীবন অন্ধত্ব বরণ করতে হয়। প্রিম্যাচিউর শিশু, যারা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয় অথবা জন্মের সময় ওজন দেড় কেজি বা তার কম হয়, সেসব শিশুর জন্মের ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই রেটিনা পরীক্ষা করা জরুরি। নতুবা তারা রেট্রোলেন্টল পিসপ্লেশিয়া নামক মারাত্মক রেটিনার রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতে পারে। শিশুদের জন্য আরেকটি রোগ হলো রেটিনার টিউমার। সাধারণত তিন বছর অথবা তার নিচে শিশুরা চোখে কম দেখলে অথবা শিশুদের চোখের মণি সাদা দেখা গেলে তখন রোগটিকে সাধারণত জন্মগত ছানি বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
আমাদের শারীরিক অনেক রোগ আছে যেমন– ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, বার্ধক্যজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণেও রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস ৩০ বছরের আগে ধরা পড়ে এবং ইনসুলিন ছাড়া কন্ট্রোল হয় না, সাধারণত ২০ বছর পর এদের প্রায় প্রত্যেকেরই রেটিনার সমস্যা ধরা পড়ে। যাদের ডায়াবেটিস ৩০ বছরের পর ধরা পড়ে, তাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সময়েই চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীর হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে অথবা চোখের সামনে কালো কিছু ভাসতে থাকলে দ্রুত রেটিনা বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।