ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফর খুবই সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটি বলেন প্রেস সচিব।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল গত ১১ অগাস্ট রাতে মালয়েশিয়ায় পৌঁছায়। ১৩ অগাস্ট রাত ৯টা ১০ মিনিটে তারা ঢাকায় ফেরেন।
সফর প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, “খুবই ফলপ্রসূ একটা সফর হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। সফরকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের তিনটি পৃথক বৈঠক হয়েছে। এরমধ্যে একটি ছিল দুই নেতার ‘ওয়ানটুওয়ান’ বৈঠক।”
তিনি বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণের বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কথা হয়েছে। মালয়েশিয়ান শ্রমিকরা যেসব সামাজিক সুবিধা পান, বাংলাদেশি শ্রমিকরাও এখন থেকে সে ধরনের সুবিধা ভোগ করবেন।”
“মালয়েশিয়ান বাংলাদেশিরা ইংরেজি কিংবা মালয় ভাষায় দক্ষতা থাকে না। তারা এখন থেকে বাংলায় তাদের অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় যেসব অনিয়মিত বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন, তাদেরকে যেন নিয়মিত করা হয়, সে বিষয়ে বলা হয়েছে।”
প্রেস সচিব বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ফোন করে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, ডেলিগেশন পর্যায়ে যেসব বিষয়ে আলাপ হয়েছে, সেগুলো মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।”
প্রেস সচিব বলেন, “মালয়েশিয়ায় সিকিউরিটি গার্ড ও কেয়ারগিভার ক্যাটাগরিতে নতুন রিক্রুটমেন্টের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। তাদের প্রচুর সিকিউরিটি গার্ড প্রয়োজন, এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আশা করছি এর বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যাবে।”
শফিকুল আলম বলেন, “মালয়েশিয়ায় ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নতকোত্তর পর্যায়ে লেখাপড়া করছেন। সেই দেশে ‘গ্রাজুয়েট প্লাস’ একটা সুবিধা রয়েছে। এর আওতায় অন্য দেশের পড়ুয়ারা কাজ করার সুযোগ পান। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এই সুবিধা চাওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা বিষয়টি দেখবেন।“
প্রেস সচিব বলেন, “মালয়েশিয়া সেমিকন্ডাক্টর খাতের বড় একটি শিল্প রয়েছে। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। এ খাতে প্রতি বছর ছয় হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়। আমরা আশা করছি, আমাদের দেশের যারা সেখানে পড়াশোনা করছেন, তাদের জন্য হাইস্কিল কাজের বড় দুয়ার উন্মোচন হবে। বাংলাদেশের সনদগুলো যেন মালয়েশিয়ায় গ্রহণ করা হয়, সেটার জন্যও কথা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়ার রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ বা আরসিইপি রয়েছে। বাংলাদেশ যেন এটার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেজন্য বৈঠকে বলা হয়েছে।
“হালাল ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান হালাল সার্টিফিকেশন করে, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। শিগগিরই একটি প্রতিনিধি দল আসবে। আমাদের দেশে একটা হালাল ইকোনমিক জোন করতে চাচ্ছি। সেখানে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে,“ বলেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের তিনটি বৈঠক হয়। প্রতিটি বৈঠকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।”
প্রেস সচিব আরও বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে মালয়েশিয়ার বড় বড় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে। পেট্রোনাস, প্রোটন, মালয় সরকারের সভরিন ফান্ড খাজানা, নির্মাণ কোম্পানি সানওয়ে গ্রুপের সঙ্গে এবং পামঅয়েল উৎপাদনকারী অনেক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। রবি অজিয়েটার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ দেখতে পাব।”