জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা। এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে খুনি ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে এবং পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ছাত্র-জনতার প্রবল রোষে ভীত-সম্রস্ত স্বৈরাচারীরা আবু সাঈদ-ওয়াসিম, মুগ্ধসহ অকুতোভয় প্রায় ২ হাজার বিপ্লবী ছাত্র জনতা খুন হয়েছিল। হতাহতের সংখ্যা আরও কয়েক হাজার। একাত্তরের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চাইতে সুকঠিন, রক্তাক্ত এবং দুর্গার জনগণ সমর্থিত এমন আন্দোলন গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। সেইসব শহীদ, হতাহত এবং যোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা এবং অভিবাদন।
জাতি যখন বর্ষপূর্তি পালনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে জুলাই শহীদদের, তখনি পতিত স্বৈরাচারের নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পক্ষথেকে কোন ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা অনুশোচনা প্রকাশের পরিবর্তে তারাই আবার শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা ও সমাবেশের উপর অতর্কিত হামলা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে, যা এখন ক্ষমার অযোগ্য। তাই অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের তিন লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার স্তম্ভকে সামনে রেখে রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই ছাত্র গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। চূড়ান্ত পর্যায়ে তা ফ্যাসিবাদের পতন এবং নতুন রাষ্ট্রীয় বন্দোবস্তের আকাংখায় তা চূড়ান্ত সাফল্য পায়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতা বিভাজন-রাজনীতির অবসানে সকল রাজনৈতিক দল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল এবং তারা ৮ আগস্ট গঠিত ড. ইউনূসের অন্তবর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল। ঠিক জাতির এই যুগসন্ধিক্ষণে অভ্যূত্থানের পরবর্তীতে আমরা নবীন ও প্রবীনের নেতৃত্বে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ‘২৪ শে গণঅভ্যূত্থানের আকাঙ্খার সমন্বয়ে আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনতা পার্টি বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ ঘটে।
গত এক বছরে অন্তবর্তী সরকার একাত্তর ও চব্বিশের স্বপ্নগুলো রূপায়নে কতোখানি সমর্থ হয়েছে, সে বিবেচনা করা আজ এয়োজন।
গণঅভ্যূত্থানের বর্ষপূর্তির প্রত্যাশা প্রাপ্তির মূল্যায়ন-
দু:খজনক হলেও সত্য দেশের বর্তমান অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সাধারণ আপামর জনতাকে চরমভাবে হতাশ করেছে, কারণ অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক অস্থিরতা, বিদেশী বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখতে পারেনি। সংস্কার সাধনের ক্ষেত্রে ধীরগতি আজকের জনমনে প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। তদুপরি বিগত স্বৈরাচারের সহযোগীরা এখন বিচারালয় ও প্রশাসনে বহাল আছে । ঐকমত্য কমিশন আলোচনার সংস্কৃতি তৈরী করলে ও বর্তমানে তা রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করেছে। গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের বাইরে রেখে এক ধরনের এলিট সংস্কারে তারা ব্যস্ত। জুলাই সনদ-এর নামে বর্তমান সরকারের বৈধতামূলক একটা স্বীকৃতি সনদ জন্ম করানোই যেন মূল লক্ষ্য। এ জন্যে কখনও বিএনপি, কখনও জামায়াতের বা এনসিপির কাঁধে ভর করা, মব জাস্টিসের ওপর নির্ভর করে বিভাজন সৃষ্টির চক্রান্তও পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক কুৎসা বিনিময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ইসলামী আন্দোলনের নেতা চরমোনাইয়ের পীর, জামায়াতের ইসলামীর নেতৃবৃন্দ নামে গঠিত নজীরবিহীন অশালীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। আমরা এর আশু অবসান চাই। বর্তমানে দুর্যোগপূর্ণকালে একদিকে মেকি জাতীয় ঐক্য অন্যদিকে পারস্পরিক কটুবাক্যের প্রতিযোগিতার অবসানে প্রকৃত জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা গণঅভ্যুত্থানের এই বর্ষপূর্তিতে আমাদের একান্তিক কামনা।
জনতা পার্টি বাংলাদেশ একটি জাতীয় রাজনৈতিক মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে ‘জুলাই সনদ’ চায়। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চাই। কিছু মৌলিক সংস্কার, ফ্যাসিবাদীদের দৃশ্যমান বিচার, মব ভায়োলেন্স ও নারী শিশুর প্রতি সহিংসতার অবসান, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় দখলদারির ও চাঁদাবাজদের অবসান চাই। ভোটের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন হলে তা জাতীয় সংকটকে মোচন করা তো দূরের কথা বরং আরেক অনিশ্চয়তাপূর্ণ ভবিষ্যত আরও আন্দোলনের আশংকা দৃশ্যমান হতে পারে। আরও বলা প্রয়োজন, পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের মদদদাতা আধিপত্যবাদী শক্তির শত্রুদের চক্রান্ত তো চলছেই।
জনতা পার্টি স্পষ্টভাবে জানাতে চায় যে, দেশে কোন মব ভায়েলেন্স আমরা প্রশ্রয় দেবো না, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের গুমখুন, অন্যায়-অবিচার, অর্থ-লুণ্ঠনকারী ও পাচারকারীদের দূর্ণীতির সাথে যারা জড়িত তাদের সঠিক বিচার করতে হবে। আমরা জানি অর্থনীতি সচল না হলে, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, যতই রাজনীতির কথা বলিনা কেন জনগণের কাছে তার কোন মূল্য থাকবে না। বেকারত্ব অবসানের জন্য কর্মসংস্থান দরকার। আর কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে দেশি- বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য্য। অতি সম্প্রতি মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনের ফটকে পাথর দিয়ে থেতলিয়ে একজন ব্যবসায়ীকে চাঁদা না দেবার কারণে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার চাই। সে যে দলেরই হোক না কেন।
গত ০৯ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশী রপ্তানীমুখী পণ্যের ৩৫% শূল্ক আরোপ করেছে। গার্মেন্টস শিল্পের সবচেয়ে বড় মার্কেট ইউএসএ এর বিকল্পপথ কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তার কৌশল নির্ধারণে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপাওে সরকারকে সহযোগীতা করতে চাই। কিন্তু সরকার/ঐক্যমত্য কমিশন শুধুমাত্র গুটি কয়েক রাজনৈতিক দলকে স্পেস দিচ্ছে। আমরা পত্র দেয়ার পরও সংস্কার কার্যক্রমে ডাকা হচ্ছে না। এতে সরকারের বিমাতা শুলভআচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা বলার উদ্দেশ্য হলো আমাদের দলে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি ও বিজ্ঞ আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক এবং সামরিক-বেসামরিক অবসরপ্রাপ্ত আমলারা রয়েছেন। আমরা মনে করি এতে দেশ ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সর্বাগ্নে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে, অর্থনীতিকে সচল রাখতে দলমতের উর্ধ্বে সকলকে একত্রিত হয়ে মব ভায়েলেন্স প্রতিরোধ করতে হবে। আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। কোর্টকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জনতা পার্টি বাংলাদেশ সকল শর্ত প্রতিপালন করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আইন অনুযায়ী ওই আবেদনে তথ্যের কোন অসম্পূর্ণতা থাকলে কমিশনের চিঠি পেলে আমরা তা সংশোধন করার চেষ্টা করবো । কিন্তু কোন দল প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়নি- এমন প্রচারে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আগামীর সংসদ নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে সুষ্ঠু ও অবাধ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি।
পরিশেষে বলতে চাই, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া, সুস্থ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
সংবাদ সম্মেলনে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, পার্টির মহাসচিব শওকত মাহমুদ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সাংবাদিকদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল হক হাফিজ ,সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান ,রেহানা সালাম ,অ্যাডভোকেট এম আব্দুল্লাহ, মেজর অব ইমরান ,এম এ ইউসুফ, উপদেষ্টা শাহ মোঃ আবু জাফর, মেজর অব মুজিব , মোজাম্মেল হক , যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল হক তালুকদার রাজা , সমন্বয়কারী নুরুল কাদের সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল কবির ,শিউলি সুলতানা রুবি,সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌসী মাহমুদ, মুরাদ আহমেদ, ডাক্তার মো মাসুদুজ্জামান, আবু সুফিয়ান, দপ্তর সম্পাদক মৃধা মোহাম্মদ আল-আমিন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার মোঃ সোলায়মান, সদস্য এস কে রোমা, নাজমুল হাসান লিমন প্রমুখ।