পূজার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কলকাতা সফর ঘিরে দুই দিনের জন্য শহরের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়তে চলেছে, কারণ ১৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানী শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ভারী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, রাজভবন থেকে রেড রোড, মা উড়ালপুল থেকে ফোর্ট উইলিয়াম—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোয় এই নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হবে। ফলে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এতে বাধাগ্রস্ত হবে তা বলাই বাহুল্য।
প্রশাসনের দাবি- নিরাপত্তার কারণে এই বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী সেনার কম্বাইন্ড কমান্ডার্স কনফারেন্সের উদ্বোধন করবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হচ্ছে- রাজনৈতিক লাভক্ষতির খাতিরে শহরের নাগরিক জীবনে বারবার এমন চাপ কেন আসছে।
পূজার আগের ক’দিন শহরে যেখানে দোকানপাটে ভিড়, কেনাকাটার চাপ, সেখানেই ট্রাফিক বন্ধ হয়ে গেলে সবচেয়ে ভুগবেন সাধারণ মানুষ। ট্রাক বন্ধ থাকলে পণ্য সরবরাহও ব্যাহত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফরের আড়ালে নির্বাচনী বার্তাও স্পষ্ট। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় বাড়তি নজর দিচ্ছে এবং মোদীর সফরকে বিজেপি একটি বড় প্রদর্শন হিসেবে ব্যবহার করবে। তৃণমূল এটাকে কেবল সরকারি কাজ বলেই চিত্রিত করছে, কিন্তু বিজেপির কৌশল স্পষ্ট—পূজার আবহে মানুষের মনে প্রবেশ করা।
কলকাতার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে আক্ষেপ থাকবে, কিন্তু বিজেপি চাইছে মানুষ যেন বার্তা পান প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য এসেছেন, রাজ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এই সফর কি সত্যিই নির্বাচনী সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও ভোটের মাঠে দৃঢ় প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে শহরে বিধিনিষেধের ফলে সাধারণ মানুষের মনে যে ক্ষোভ জমবে তা যদি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তৃণমূল তাহলে বিজেপির হিসেব উল্টে যেতে পারে।
সব মিলিয়ে পূজার প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর শুধু নিরাপত্তা বা সামরিক কনফারেন্সের অনুষ্ঠান নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে আছে ভোটরাজনীতির সমীকরণ এবং নাগরিক জীবনের অসুবিধার প্রশ্ন, আর সেই দুইয়ের টানাপোড়েনেই নির্ধারিত হবে এই সফরের প্রকৃত প্রভাব।