English

29 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

কয়েল ছাড়া মশা মুক্ত রাখার কার্যকরী উপায়

- Advertisements -

ঘরে-বাইরে কোথাও নেই নিস্তার। গরম আবহাওয়ার সঙ্গে বেড়েই চলেছে মশাদের উৎপাত। মশার রোগজীবাণু সংক্রমণের কারণে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ভয়াবহ মৃত্যুর হারও থামানো যাচ্ছে না। চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি মারাত্মক রোগও সংক্রমিত হচ্ছে। মশাদের উৎপাতের কারণে ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। স্প্রে, কয়েল, অ্যারোসল কোন কিছুতেই মশা তাড়ানো সহজ নয়। আবার এসব দিয়ে মশা তাড়ালেও আমাদের স্বাস্থ্য এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি ৮ ঘন্টা আপনি কোন কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন তাহলে সেটি ১৪০টি সিগারেটের ধোঁয়া উৎপন্ন করে যেটি সরাসরি আপনার মধ্যে শোষিত হয়। যা আপনার হার্ট, ফুসফুস এবং শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। এ জন্য সচেতনতা প্রয়োজন আরও বেশি। প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করা জরুরী। একনজরে জেনে নিন মশা তাড়ানোর কার্যকরী উপায়-

কর্পূর

কর্পূরের গন্ধ মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আপনি যে কোনও ওষুধের দোকানে বা মুদির দোকান থেকেও কর্পূরের ট্যাবলেট কিংবা গুঁড়া কিনে আনতে পারেন। একটি কর্পূরের টুকরা একটি ছোটো পাত্রতে রেখে সেটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এর পর এটি ঘরের কোণে রেখে দিন। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘর থেকে মশা গায়েব হয়ে যাবে। দু’দিন পর পাত্রের পানির পরিবর্তন করুন। পাত্রে রাখা আগের পানি ফেলে দেবেন না। এই পানি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করলে ঘরে পিঁপড়ের উপদ্রব থেকেও মুক্তি পাবেন।

লেবু ও লবঙ্গ

একটি লেবু দুই টুকরা করে কেটে নিন। এর পর কাটা লেবুর ভেতরের অংশে বেশ কয়েকটা করে লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা গেঁথে শুধুমাত্র মাথার দিকের অংশ বাইরে রেখে লবঙ্গ গেঁথে দিন। এর পর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে রেখে ঘরের কোণায় রেখে দিন। ব্যস, এতেই বেশ কয়েকটা দিন মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই পদ্ধতিতে মশা ঘরের ধারেকাছে ঘেঁসবে না একেবারেই। আপনি চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। এতেও মশার ঘরে ঢোকার পথ বন্ধ হবে।

জৈবিক প্রক্রিয়া

প্রথমে আপনাকে একটি মাটির প্রদীপ নিয়ে নিতে হবে এবং তার মধ্যে দিতে হবে এক চামচ রসুন বাটা । এবং তার মধ্যে যোগ করতে হবে কিছুটা পরিমাণ তেজপাতা গুঁড়া এবং সামান্য পরিমাণ কর্পূর গুঁড়া। সমস্ত উপকরণগুলোকে ভাল করে মিশিয়ে তার মধ্যে দিয়ে দিন সরিষার তেল । যাতে সমস্ত উপকরণগুলো সরিষার তেলের মধ্যে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকে । এরপর একটি সলতে যোগ করে দিন তার মধ্যে । এবং প্রদীপটি ধরিয়ে দিন । এর ফলে যে ধোঁয়া নির্গত হবে সেখান থেকে আপনার বাড়ির আনাচে-কানাচে থাকা মশা বাড়ির বাইরে চলে যাবে । এতে আপনার শরীরও কিছু ক্ষতি হবে না।

নিমের তেলের ব্যবহার

নিমের মশা তাড়ানোর বিশেষ একটি গুণ রয়েছে। নিমের তেল ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। তাই একসাথে দুটি উপকার পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিমের তেল। সমপরিমাণ নিমের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার ধারে কাছে ভিড়বে না এবং সেই সাথে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যাও দূর হবে।

পুদিনার ব্যবহার

ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন। জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা মতে তুলসির মতো পুদিনা পাতারও রয়েছে মশা দূরে রাখার ক্ষমতা। শুধু মশাই নয় পুদিনার গন্ধ অনেক ধরণের পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়েছে। চাইলে পুদিনার তেলও গায়ে মাখতে পারেন।

টবে লেমন গ্রাস লাগান

থাই লেমন গ্রাসে আছে ‘সাইট্রোনেলা অয়েল’ যা থেকে বের হয় একধরনের শক্তিশালী সুগন্ধ। এই সুগন্ধ কিন্তু মশাদের যম। মশারা এর কাছেও ঘেঁষে না। ফলে আপনার আশেপাশে লেমন গ্রাসের ঝাঁড় থাকলে মশারা আপনাকে খুঁজে পাবে না। আর লেমন গ্রাস দেখতেও কিন্তু মন্দ নয়। এমনসব স্থানে এসব গাছের টব রাখুন যেখানে সকাল বিকাল কিংবা রাতে পরিবারের অন্যদের নিয়ে কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা বা সময় কাটান। এভাবে থাকুন মশা মুক্ত।

ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়া

প্রতিদিন নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়া ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

হলুদ বৈদ্যুতিক আলো

ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়। এছাড়া ঘরে এবং ঘরের বাইরে লাইট বাল্বগুলো পরিবর্তন করুন। মশারা সাধারণত সব লাইটের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এলইডি লাইট, হলুদ ‘বাগ লাইট’, বা সোডিয়াম লাইট এক্ষেত্রে উপকারী। এগুলো জ্বালালে সন্ধ্যাবেলা ঘরে বাইরে মশাদের আক্রমণ অনেকটাই কমে যাবে।

চা-পাতা পোড়ান

ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

নিমপাতা পোড়ান

কয়লা বা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পোড়ালে যে ধোঁয়া হবে তা মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর।

ক্যাটনিপ অয়েল

ক্যাটনিপ অয়েলের নেপেটালেকটন নামক পদার্থ মশা তাড়াতে ডিথাইল-মেটাটোলোয়ামাইড থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি শক্তিশালী। ক্যাটনিপ অয়েল মাখালে মশারা ধারে কাছেও ঘেঁষবে না।

ফ্যান চালু রাখুন

মশারা খুবই হালকা। অন্যদিকে একটি ফ্যানের স্পীড ঘন্টায় প্রায় দুই মাইল। মশাদের উড়বার গতিবেগের চাইতে ফ্যানের ঘুরবার গতি অনেক বেশি হওয়াতে সহজেই মশাদের ব্লেডের কাছে টেনে নেয়। আপনার বসার স্থান কিংবা ডেক বা যেসব স্থান থেকে মশারা খুব সহজে আপনার গৃহে প্রবেশ করতে পারে, এমনসব স্থানে মশাদের আগমন সময়ে আপনার টেবিল ফ্যান বা পেডাল ফ্যানটি চালু রাখুন। মশাদের হাত থেকেও যেমন নিস্কৃতি পাবেন তেমনি গরমেও পাবেন আরাম।

কালো, নীল ও লাল কাপড় এড়িয়ে চলুন

মশাদের পছন্দের রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন। কি অবাক হচ্ছেন! কিছু কিছু প্রজাতির মশারা কয়েকটি গাঢ় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেমন কালো, নীল আর লাল। আর তারা গরমের প্রতিও সংবেদনশীল। তাই ঠান্ডা রাখুন ঘর আর পোষাক পড়ুন হালকা রঙের।

নারিকেলের আঁশ পোড়ান

নারিকেলের গায়ে থাকা আঁশের সাহায্য দূর করতে পারেন মশা। নারিকেলের আঁশ শুকিয়ে টুকরা করুন। একটি কাঠের পাত্রে রেখে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি ধরুন। ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই মশা দূর হবে।

কেরোসিন তেল স্প্রে

কেরোসিন তেল স্প্রে বোতলে নিন। কয়েক টুকরা কর্পূর মেশান। ভালো করে ঝাঁকিয়ে স্প্রে করুন রুমে। মশা থাকবে না।

সুগন্ধি ব্যবহার করুন

মশারা সুগন্ধি থেকে দূরে থাকে। সুতরাং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, সুগন্ধি, কিংবা লোসন মেখে শুতে পারেন। নিশ্চিত করে বলা যায় এতে মশা সাধারণ থেকে অনেক কম দেখা যাবে।

রসুনের স্প্রে করুন

রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই কার্যকারী প্রাকৃতিক উপায়। ৫ ভাগ পানিতে ১ ভাগ রসুনের রস মেশান। মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন। এতে করে যে কোন ধরণের রক্ত চোষারা আপনার ধারে কাছেও আসবে না।

জমানো পানি থেকে দূরে থাকুন

খেয়াল রাখুন যেন কোথাও জল জমে না থাকে। ঘরের আনাচে-কানাচে কিংবা উঠোনে পানি জমে থাকলে সেখানে মশারা বংশবিস্তার করতে পারে। তাই যেখানেই পানি জমুক না কেন, তা সরিয়ে ফেলুন। মশার বংশবিস্তার রোধ করুন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন