চোখের পাতা কাঁপা খুব বড় কোনো রোগের কারণ নয়। আর যদি দীর্ঘ সময় ধরে এক চোখ বা দুই চোখেই এমন হতে থাকে, সেই সঙ্গে দৃষ্টি ঝাপসা হয়, তাহলে সতর্ক হতে হবে। কারণ এটা বড় কোনো বিপদের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময়েই স্ট্রোকের আগে চোখের পাতায় এমন কাঁপুনি ধরে।
আবার চোখ কাঁপা মানেই অশুভ লক্ষণ, তা কিন্তু নয়। যদিও অনেকেই এমনটি মনে করে থাকেন। আর বাঁ চোখ কাঁপলে শুভ, আর ডান চোখ কাঁপলে কতটা অর্থহানি হতে পারে, সেসব ধারণার বাছবিছার না করে বরং খেয়াল করুন— এতে স্বাস্থ্যহানি ঠিক কতটা হবে।
চোখ কাঁপা মানে হলো— চোখের ওপরের পাতায় কম্পন, কখনো চোখের নিচের ‘ওয়াটার লাইন’-এও কাঁপুনি হতে থাকে। এর সঙ্গে শুভ-অশুভের কোনো যোগসূত্র নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে— ‘অকুলার মায়োকেমিয়া’।
আর স্ট্রোকের নাম শুনলেই আতঙ্ক হয়। তবে এ স্ট্রোক মস্তিষ্কে নয়, হয় চোখে। চিকিৎসকরা বলেন, ‘আই স্ট্রোক’। চোখে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে চোখের রক্তনালিগুলোর ওপরে চাপ বাড়ে। রেটিনা রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। চোখের ভেতর প্রদাহ শুরু হয়।
আবার স্ট্রোক একই সঙ্গে দুটি চোখে হয় না। তবে রোগ নির্ণয়ে বা চিকিৎসায় গাফিলতি ঘটলে দুই চোখেরই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। অনেক দিন ধরে রক্তচাপ বা শর্করা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও তার প্রভাব চোখের ওপর পড়ে। হঠাৎ ঘটা কোনো দুর্ঘটনায় চোখে আঘাত লাগলে বা সর্বক্ষণ কম আলোয় মোবাইল বা ল্যাপটপে দৃষ্টি দিয়ে রাখলে, তা থেকে চোখের দফারফা হতেই পারে। চোখের স্ট্রোক যে হঠাৎ করে হবে, তা নয়। এর কিছু লক্ষণ আগেই ফুটে ওঠে। এর মধ্যে একটি হলো চোখের পাতা কাঁপা বা অকুলার মায়োকেমিয়া।
এ বিষয়ে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে— অকুলার মায়োকেমিয়া যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তা স্ট্রোকের ইঙ্গিত দিতে পারে। চোখের স্ট্রোককে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়— ‘রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন’। রেটিনায় রক্ত সরবরাহকারী ধমনী বা শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে বা অন্য কোনো কারণে ব্লক হয়ে যায়। ফলে রেটিনার কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে নষ্ট হতে থাকে। এতে এক চোখে আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ’ থেকে এ বিষয়ে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখে স্ট্রোক হলে তা রোগী বুঝতে পারেন না। কারণ চোখের মধ্যে বিশেষ কোনো কষ্ট বা যন্ত্রণা হয় না। তবে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। সে কারণেই চোখের পাতায় কম্পন হতে পারে। তা যদি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে তাহলে সতর্ক হতেই হবে। সে ক্ষেত্রে চক্ষু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
চোখ ভালো রাখতে যা করা উচিত
১. চোখের স্ট্রোক এড়ানোর একটি অন্যতম পন্থা হলো প্রাণায়াম। আর আপনার চোখ নিয়মিত প্রাণায়াম করলে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে চোখের ওপরও চাপ কম যায়।
২. প্রতিদিন ডায়েটে বিটা-ক্যারোটিন যুক্ত খাবার, যেমন— গাজর, পালংশাক, ব্রকোলি, মিষ্টি আলু রাখা যেতে পারে। এতে আপনার চোখ ভালো থাকবে। আর ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট যদি খান, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
৩. চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। দিনে যতক্ষণ চোখ দুটিকে কাজ না করালেই নয়, সেই টুকু ছাড়া বাকি সময় চোখকে বিশ্রাম দিন। রাতে শুয়ে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি, কম আলোয় বই পড়া বা ল্যাপটপ একটানা দেখে গেলে চোখের ক্ষতি হবে।
৪. দিনে কত কাপ চা বা কফি খাচ্ছেন, সেটা খেয়াল রাখেন কি? অতিরিক্ত ক্যাফিন আপনার শরীরের জন্য ভালো নয়। গবেষণা বলছে— বেশিমাত্রায় ক্যাফিন শরীরে ঢুকলে তা ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। তখন মানসিক ক্লান্তি বাড়ে। তার থেকেও চোখ কাঁপার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৫. চোখের কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থাকলে রেটিনোপ্যাথি, ম্যাকুলার এডিমা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই বয়স ৩০ পেরোলে ভিজ্যুয়াল অ্যাক্টিভিটি টেস্ট, আই রিফ্র্যাকশন টেস্ট, স্লিট-ল্যাম্প টেস্ট, আই মাসল টেস্ট, টোনোমেট্রির মতো কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখলে ভালো।