চিনিকে অনেকেই স্বাস্থ্যের জন্য বিষ মনে করেন। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকেরা প্রথমেই পরামর্শ দেন, মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করতে। সেই পরামর্শ মেনে অনেকেই খাবার থেকে চিনি বাদ দেন। কিন্তু শুধু চিনি না খেলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, এমনটা সব সময় হয় না। মিষ্টি না খেলেও অনেক সময় রক্তে সুগার বাড়তে পারে।
এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলোতে চিনি না থাকলেও শরীরে ঢুকে দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব খাবার নিয়মিত খেতে খেতে অনেকে না বুঝতেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পড়েন।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবার গুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে-
১. সাদা চাল
সাদা চাল আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় খুব পরিচিত একটি উপাদান। কিন্তু এতে থাকে উচ্চমাত্রার রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের পরিমাণ খুব কম থাকে। ফলে এটি শরীরে খুব দ্রুত ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়।
ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন বা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য সাদা চাল নিয়মিত খেলে বিপদের কারণ হতে পারে।
২. ময়দার তৈরি খাবার
ময়দা দিয়ে তৈরি খাবারও স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর নয়। ময়দা মূলত প্রক্রিয়াজাত শস্য থেকে তৈরি হয়, যেখানে প্রক্রিয়াকরণের সময় ফাইবার ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণগুলো বাদ পড়ে যায়। ফলে এই রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট শরীরে গিয়ে খুব দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
নিয়মিত ময়দার তৈরি খাবার খেলে শুধু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিই বাড়ে না, সঙ্গে ফ্যাটি লিভারসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়তে পারে।
৩. মধু ও গুড়
অনেকে মনে করেন, মধু বা গুড় হলো চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প। কিন্তু বাস্তবে এই দুই উপাদানও মূলত গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজের সংমিশ্রণ তৈরি। অর্থাৎ এগুলোও এক প্রকার শর্করা।
সাধারণ চিনি তুলনায় রক্তে শর্করার মাত্রা কিছুটা ধীরে বাড়লেও নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই মধু বা গুড়ের অতিরিক্ত খাওয়া নিরাপদ নয়।
৪. সিরিয়াল জাতীয় খাবার
অনেকেই সকালের নাস্তায় কর্নফ্লেক্স বা বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল খেতে অভ্যস্ত। তাদের ধারণা-এগুলো স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ সিরিয়ালেই দানাশস্যের পরিমাণ কম থাকে এবং এতে উচ্চমাত্রার চিনি থাকে। ফলে নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে পারে।
৫. ফলের রস
বাজারে পাওয়া প্যাকেট জাতীয় ফলের রস সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ চিনি থাকে, যা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে যেতে পারে।
এছাড়া বাড়িতে ফলের জুস বানানো হলেও সতর্ক থাকতে হবে। রস তৈরি করার সময় ফলের প্রাকৃতিক ফাইবার ও অনেক ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফল খাওয়ার মূল উপকারিতা চলে গিয়ে শরীরে অতিরিক্ত শর্করা তৈরি হয়।
৬. সস ও ভাজা খাবার
সস ও ভাজা জাতীয় খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কেচাপ, বারবিকিউ সস,মেয়োনিজে লুকিয়ে থাকে চিনি। শুধু তাই নয়, এসব সসে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ, যা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। নিয়মিত এসব সস বা ডিপ খেতে খেতে শরীরে অতিরিক্ত চিনি জমা হয়, যা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
৭. স্টার্চযুক্ত সবজি
আলু হলো এমন একটি সবজি, যেটিতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ বা শ্বেতসার থাকে। যদিও এটি এক ধরনের জটিল শর্করা, রান্নার পর এটি শরীরে দ্রুত হজম হয়। ফলে আলু বা অনুরূপ স্টার্চযুক্ত সবজি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।
যে খাবারগুলো খেতে পারেন
স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প বেছে নেওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক সাহায্য করে। ময়দার পরিবর্তে গম, জোয়ার বা রাগির মতো দানাশস্যের আটা ব্যবহার করলে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সিরিয়াল হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে ওটস, কিনোয়ার মতো স্বাস্থ্যকর উপাদান।
এছাড়া ফলের রসের পরিবর্তে পুরো ফল খাওয়া শরীরের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। কেচাপ বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত সসের পরিবর্তে বাড়িতে পুদিনা, টকদই বা তেঁতুলের মতো উপাদান দিয়ে সহজেই স্বাস্থ্যকর সস তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।
