English

29 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

শোলাকিয়ায় অগ্রাধিকার নিরাপত্তায়, সকাল ১০টায় জামাত

- Advertisements -
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবারও অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত। এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাত। এবারও নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে সব আয়োজন। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এবারের ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। আর নারীদের জন্য সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, শোলাকিয়ার জামাত কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে ঈদের পাশাপাশি বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ হয়ে ধরা দেয়। বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়- এ বিশ্বাস থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় যান। তবে তারা এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পরিধি বাড়ানোর দাবি করেছেন।

শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বারী বলেন, এই জামাতে দিন দিন লোক সমাগম বাড়ছে। নামাজের সময় মাঠ উপচে আশপাশের রাস্তাঘাটেও লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। তখন মুসল্লিদের দুর্ভোগ পড়তে হয়। তাই মাঠটি আরো বড় করা প্রয়োজন।

ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবারও নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন ঈদগাহ মাঠ। এ আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না তারা। তাই সবকিছু খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।

সরেজমিন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়াল রং করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। বিদ্যুতের লাইন টানা ও সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে শোভাবর্ধনের কাজও চলছে মাঠ ও শহরজুড়ে। সব মিলিয়ে ঈদের জামাত ঘিরে শোলাকিয়ায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।

শহরতলীর বৌলাই গ্রাম থেকে ঈদের নামাজের খোঁজ-খবর নিতে শোলাকিয়া মাঠে এসেছেন বেশ কয়েকজন যুবক। তারা জানান, করোনার দু’বছর নামাজ হয়নি, তাই আসা হয়নি। তাদের একজন মহিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় নিয়মিত নামাজ পড়ি। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার সময়ও মাঠে ছিলেন তিনি। এবার অনেক গরম। তবু মুসল্লিদের উৎসাহ-উদ্দীপনার ঘাটতি নেই।
শহরের হারুয়া এলাকার রফিকুল আলম বলেন, তিনি ৪০ বছর ধরে এই মাঠ নামাজ আদায় করেন। বাসার পাশে মসজিদ থাকলেও ঈদের দিন সোজা চলে আসেন শোলাকিয়ায়। কেবল ভালো লাগা থেকে তিনি বারবার ছুটে আসেন এখানে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে,  দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। আরা নিরাপত্তার স্বার্থে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে কেবল জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ছাতা, ব্যাগ, লাঠি বা লাইটার জাতীয় কিছু মাঠে না নিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জামাত আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এ কর্মকর্তা।

২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো উন্নত ও কঠোর করা হয়েছে। ঈদের দিন পুরো মাঠ ঘিরে থাকবে চারস্তরের নিরাপত্তা বলয়। প্রত্যেক মুসল্লি বেশ কয়েকবার তল্লাশির মুখোমুখি হবেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ।

নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ  বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, এবার অনেক বেশি লোক হবে শোলাকিয়ায়। তাই সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুরো আয়োজনকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
তিনি জানিয়েছেন, শোলাকিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো হুমকির খবর তাদের কাছে নেই। তার পরও পুলিশ সবকিছু জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

জানা গেছে, নামাজের সময় প্রায় ১৪০০ পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র‍্যাব সদস্য ছাড়াও আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও  আনসার সদস্যরা মাঠ ও মাঠের বাইরে মোতায়েন থাকবেন। সাদা পোশাকে নজরদারি করবেস বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে, পুরো মাঠ বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল টিম আসবে। এ ছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ  বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শহর ও মাঠকে সুন্দর করে সাজানো, মাঠকে নামাজের উপযোগী করে তোলা, মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এক কথায় শোলাকিয়ায় আগত মুসল্লিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হবে পৌরসভার পক্ষ থেকে।

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে ছোড়া হয় বন্দুকের ছয়টি ফাঁকা গুলি। নামাজের পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি গুলি ছুঁড়ে নামাজ শুরুর সঙ্কেত দেওয়া হয়।

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন