উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া এক নারী দেশটির নেতা কিম জং উনের বিরুদ্ধে আটক অবস্থায় নির্যাতনের জন্য মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতে আগামী শুক্রবার তিনি দেওয়ানি ও ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করবেন। বিবিসি বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চোই মিন কিউং নামের ওই নারী ১৯৯৭ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে চীনে পালিয়ে যান।
তবে ২০০৮ সালে তাকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়। তারপর যৌন নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
চোইকে সহযোগিতা করা দক্ষিণ কোরিয়ার একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, তিনি শুক্রবার অভিযোগ দায়ের করলে, এটিই হবে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী কোনো দেশত্যাগীর দেশটির শাসকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ।
মামলায় কিম ও আরো চারজন পিয়ংইয়ংয়ের কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই নারীকে সহযোগিতা করা দক্ষিণ কোরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা ডেটাবেইস সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান হিউম্যান রাইটস (এনকেডিবি) আরো জানায়, চোইয়ের অভিযোগটি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা।
এনকেডিবির বিবৃতিতে চোই বলেছেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, এই ছোট পদক্ষেপটি স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে উঠবে। যাতে এই নৃশংস শাসনে আর কোনো নিরীহ উত্তর কোরীয় কষ্ট না পায়। উত্তর কোরিয়ার শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হিসেবে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য কিম রাজবংশকে জবাবদিহি করার জন্য আমার গভীর ও জরুরি দায়িত্ব রয়েছে।
২০১২ সালে চোই পুনরায় উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে যান। তিনি বলেন, সেই কঠিন সময়ের মানসিক আঘাতে এখনো তাকে ভুগতে হচ্ছে এবং তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের নির্যাতন থেকে শুরু করে লিঙ্গ ও শ্রেণির ভিত্তিতে পদ্ধতিগত বৈষম্যের অভিযোগও রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত আগেও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন।
তবে এই অভিযোগগুলো ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের, যার রায় মূলত ছিল প্রতীকী ও পিয়ংইয়ং এগুলোকে অগ্রাহ্য করেছে।
এনকেডিবির নির্বাহী পরিচালক হান্না সং বিবিসিকে বলেছেন, দেওয়ানি অভিযোগের সঙ্গে ফৌজদারি অভিযোগগুলো দায়ের করায় মামলাগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পূর্বের মামলাগুলো শুধু দেওয়ানি মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
২০২৩ সালে সিওলের আদালত উত্তর কোরিয়াকে কোরীয় যুদ্ধের সময় উত্তর কোরিয়ায় যুদ্ধবন্দি হিসেবে নির্যাতনের শিকার দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিককে পাঁচ কোটি ওন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে আদালত জাপান থেকে কোরিয়ায় যাওয়া পাঁচজনকে ১০ কোটি ওন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বিংশ শতাব্দীর ষাট ও আশির দশকে প্রত্যাবাসন অভিযানের অধীনে কোরিয়াতে সুন্দর জীবনের আশায় গিয়েছিল। তবে তাদের ভাষ্য মতে, তাদের আটক করে জোর করে কাজ করানো হয়েছিল। তবে উত্তর কোরিয়া একটিরও জবাব দেয়নি।
হান্না সং দাবি করেছেন, রায়গুলো বাদীদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সমাপ্তির আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জবাবদিহি নিয়ে বছরের পর বছর কাজ করার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, ভুক্তভোগীরা আসলে কেবল আর্থিক ক্ষতিপূরণ নয় স্বীকৃতি চান। তাদের পক্ষে আদালতের রায় পাওয়া বিরাট অর্থ বহন করে। এটি তাদের আশ্বাস দেয়—তাদের গল্প কেবল তাদের সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় না, এটি রাষ্ট্র স্বীকৃত ও আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ।’