শীতের শুরু থেকেই শিশুর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, বিশেষ করে ব্যাপকভাবে দেখা যায় ব্রঙ্কিওলাইটিস। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং খাওয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হয়। ফলে তারা ভোগে এবং অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বর্তমানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ এবং অন্তঃবিভাগে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই একে নিউমোনিয়া ভেবে ভুল করেন, কিন্তু চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিউমোনিয়া নয়, বরং রেস্পিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসজনিত ব্রঙ্কিওলাইটিস।
ব্রঙ্কিওলাইটিস হলো শিশুর ফুসফুসের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ক্ষুদ্র শ্বাসনালিগুলোর ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। সাধারণত রেস্পিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসই এ রোগের প্রধান কারণ। রোগটি নির্ণয়ে বিশেষ পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না; শিশুর বয়স, রোগের ইতিহাস এবং শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই এটি সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব।
সাধারণত শিশু দুমাস থেকে দুবছরের মধ্যে আক্রান্ত হয়। রোগের শুরুতে নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর থাকা বা না থাকা, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে বুকে পাঁজরের হাড় ভেতরের দিকে ঢুকে যায় এবং শ্বাসের সময় বাঁশির মতো শব্দ শোনা যায়। কিছু শিশু এ রোগে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে ছয় মাসের কম বয়সী, স্বল্প ওজনের, অপরিণত শিশু বা ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে থাকা শিশুর ক্ষেত্রে। ছেলে শিশুরা মেয়েদের তুলনায় কিছুটা বেশি আক্রান্ত হয়। শীতকাল প্রধান সময় হলেও বর্ষাকালেও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। বুকের দুধ যথাযথভাবে না পাওয়া, ঘরে ধূমপানের প্রভাব এবং কাঠের চুলা ব্যবহার এ ঝুঁকিকে আরও বৃদ্ধি করে। বাড়িতে আক্রান্ত শিশুর যত্নের জন্য তাকে মাথার দিক সামান্য উঁচু করে শোয়ানো, নাক পরিষ্কার রাখা, স্বাভাবিক খাবার দেওয়া, কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো এবং জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা উপকারী। যদিও কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন, স্যালবিউটামল বা কিটোটিফেন জাতীয় সিরাপ দেওয়া হয়। তবে এগুলো রোগ সারাতে বেশ কার্যকর নয়।
তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- শিশুর অস্বস্তি বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, খাওয়া বা পানি পান করতে অক্ষমতা, উচ্চমাত্রার জ্বর বা শরীরের নীলচে রঙ ধরা। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে গিয়ে জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। মনে রাখবেন, ব্রঙ্কিওলাইটিস নিউমোনিয়া নয় এবং অধিকাংশ শিশুর চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব।
কাশি দুসপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হতে পারে এবং ভবিষ্যতে কিছু শিশুর শ্বাসকষ্ট বা বুকে বাঁশির মতো শব্দ হতে পারে। রোগ প্রতিরোধে জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো, নির্ধারিত সময়মতো টিকা দেওয়া, ছমাস পর ধীরে ধীরে ঘন খাবার দেওয়া, খাবারের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং বাড়িতে ধূমপান পরিহার করা গুরুত্বপূর্ণ। ব্রঙ্কিওলাইটিস সংক্রান্ত এ তথ্যের মাধ্যমে অভিভাবকরা শিশুর যত্নে সতর্ক থাকতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন।
লেখক : অধ্যাপক, শিশুরোগ বিভাগ
চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
