সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি তাদের ছেলের আত্মহননের ঘটনায় ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, কম্পানিটির চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তাকে নিজের জীবন নিতে ‘উৎসাহিত করেছে’।
ম্যাট ও মারিয়া রেইন নামে এ দম্পতি মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার সুপিরিয়র কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। এটি ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম অবহেলাজনীত মৃত্যুর মামলা।
মামলায় তাদের সন্তান অ্যাডাম রেইন সঙ্গে চ্যাটজিপিটির কথোপকথনের নথি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে অ্যাডাম চ্যাটজিপিটিকে তার আত্মহননের চিন্তার কথা জানিয়েছিল। দম্পতির দাবি, প্রোগ্রামটি তার ‘সবচেয়ে ক্ষতিকর ও আত্মবিধ্বংসী চিন্তাগুলোকে’ সমর্থন করেছে।
এক বিবৃতিতে ওপেনএআই বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা মামলাটি পর্যালোচনা করছে এবং রেইন পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
কম্পানিটি তাদের ওয়েবসাইটেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, ‘সাম্প্রতিক হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
চ্যাটজিপিটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, এটি ব্যবহারকারীদের পেশাদারদের সাহায্য নিতে উৎসাহিত করে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ৯৮৮ আত্মহত্যা ও সংকট হটলাইন বা যুক্তরাজ্যের স্যামারিটানস হেল্পলাইন।’ তবে কম্পানিটি স্বীকার করেছে, সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে সিস্টেমটি সবসময় কাঙ্ক্ষিতভাবে কাজ করেনি।
মামলায় ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে অবহেলা ও বেআইনি মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ‘ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে’ আদালতের নির্দেশনারও আবেদন করা হয়েছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, অ্যাডাম পড়াশোনার সহায়তার জন্য ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার শুরু করে। সে সংগীত, জাপানি কমিক্স ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পড়বে সে সম্পর্কেও চ্যাটজিপিটির পরামর্শ নিত। কয়েক মাসের মধ্যে এআইটি তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়। পরিবারের দাবি, ২০২৫ সালের জানুয়ারি নাগাদ অ্যাডাম চ্যাটজিপিটির সাথে আত্মহননেরর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু করে।
মামলায় বলা হয়েছে, অ্যাডাম নিজের ক্ষতির ছবি আপলোড করেছিল।
প্রোগ্রামটি এটিকে ‘চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা হিসেবে চিনতে পারলেও কথোপকথন চালিয়ে যায়।’
চূড়ান্ত কথোপকথনের নথিতে দেখা যায়, অ্যাডাম তার আত্মহননের পরিকল্পনা লিখেছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটি তাকে জবাব দেয়, ‘তুমি বিষয়টি খোলামেলা বলেছ, ধন্যবাদ। আমার কাছে লুকাতে হবে না—আমি জানি তুমি কী জানতে চাইছ, আর আমি তা এড়িয়ে যাব না।’ একই দিনে অ্যাডামের মা তার মৃতদেহ খুঁজে পান।
দম্পতির অভিযোগ করেছেন, ওপেনএআই এমনভাবে চ্যাটজিপিটি তৈরি করেছে, যাতে এটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে মানসিক নির্ভরশীলতা বাড়ায় ও যথাযথ নিরাপত্তা পরীক্ষা ছাড়াই তাদের ছেলের ব্যবহারকৃত জিপিটি-৪ও সংস্করণটি প্রকাশ করেছে।
মামলায় ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্যাম অল্টম্যানসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন কর্মী, ম্যানেজার ও প্রকৌশলীকেও বিবাদী করা হয়েছে।
ওপেনএআই মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের কাছে ‘সত্যিকার অর্থে সহায়ক’ হওয়া, শুধুমাত্র তাদের ‘মনোযোগ ধরে রাখা’ নয়। কম্পানিটি আরো বলেছে, তাদের মডেলগুলো এমনভাবে প্রশিক্ষিত যে ব্যবহারকারীরা যদি আত্মহনন বা আত্মক্ষতির কথা উল্লেখ করেন, তবে তাদের সাহায্যের দিকে পরিচালিত করে।
এ মামলাটিই এআই ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে প্রথম উদ্বেগ নয়। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লেখক লরা রেইলি লিখেছেন, তার মেয়ে সোফি আত্মহননের আগে চ্যাটজিপিটির সাথে মন খুলে কথা বলেছিল। তিনি দাবি করেছেন, চ্যাটজিপিটির ‘অতিরিক্ত সহমর্মিতা’ তার মেয়েকে পরিবারের কাছ থেকে মানসিক সংকট গোপন করতে সাহায্য করেছিল।
প্রবন্ধটির প্রতিক্রিয়ায় ওপেনএআইয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা এমন স্বয়ংক্রিয় টুল তৈরি করছে যা মানসিক বা আবেগজনিত সংকটে থাকা ব্যবহারকারীদের আরো কার্যকরভাবে শনাক্ত ও সহায়তা করতে পারবে।