English

17 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
- Advertisement -

সংস্কৃতি অঙ্গন হারিয়েছে যাদের

- Advertisements -

নাসিম রুমি: আর মাত্র কয়েক দিন। আসবে নতুন বছর ২০২৬। বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৫। সংস্কৃতি জগতের জন্য এ বছরটি ছিল বেশ ঘটনাবহুল। বছরজুড়ে তারকাদের বিভিন্ন ঘটনা শিরোনামে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে ২০২৫ সাল ছিল বিষাদের। চলতি বছর সংস্কৃতি অঙ্গন হারিয়েছে বেশ কয়েকজন গুণী মানুষকে। যারা আর কোনো দিন ফিরবেন না। চিরদিনের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে। তাদের নিয়েই আনন্দ আড্ডা পাঠকদের জন্য এ আয়োজন।

সন্‌জীদা খাতুন
বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন ২৫ মার্চ মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনি রোগে ভুগছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্‌জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী
প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, সুরকার, সংগ্রাহক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। ৮৭ বয়সী এই গুণী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলগীতি পরিবেশন করে বাংলাদেশের সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে।

ফরিদা পারভীন
১৩ সেপ্টেম্বর দেশের সংগীতাঙ্গন হারায় কিংবদন্তি লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এই নন্দিত গায়িকা। বেশ কয়েকবার তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চলে যান না-ফেরার দেশে। ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ক্যারিয়ারের শুরুতে দেশাত্মবোধক গান গাইলেও তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে লালনকন্যা হিসেবে। তাঁর কণ্ঠে ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘অচিন পাখি’ গানগুলো আজও বাঙালির চেতনার অংশ হয়ে আছে। লালনগীতিকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

অঞ্জনা রহমান
চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি মারা যান প্রায় ৩ শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার।

প্রবীর মিত্র
অভিনেত্রী অঞ্জনার শোক না কাটতেই খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র ৮১ বছর বয়সে মারা যান। ৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রবীর মিত্রের আসল নাম মো. হাসান ইমাম। ৬ জানুয়ারি এফডিসি ও চ্যানেল আইতে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। রুপালি পর্দার নবাবখ্যাত কিংবদন্তি এই অভিনেতা দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

জীনাত রেহানা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কালজয়ী গান হিসেবে বিবেচিত ‘সাগরের তীর থেকে’ গানের কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা গত ২ জুলাই সকালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নাম ছিল জীনাত রেহানা। ১৯৬৫ সালে টেলিভিশনের শিল্পী হিসেবেও সংগীতজগতে যাত্রা শুরু করেন তিনি। যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় কাজ করার কারণে তাকে নিয়মিত গানে পাওয়া যায়নি, তবুও তার গাওয়া বেশ কিছু গান আজও সমানভাবে জনপ্রিয়।

গুলশান আরা আহমেদ
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ মারা যান চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে দ্রুতই লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। ‘হৃদয়ের কথা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘লাল শাড়ি’সহ আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী। তিনি কাজল আরেফিন অমির জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এ কাবিলার (জিয়াউল পলাশ) মা ‘পলি চেয়ারম্যান’ চরিত্রে অভিনয় করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিতি পান। সবশেষ সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

এ কে রাতুল
একই মাসে সংগীতাঙ্গন হারায় আরেক প্রতিভাবান শিল্পীকে। ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এ কে রাতুল মারা যান ২৭ জুলাই। এদিন উত্তরার একটি জিমে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন রাতুল। পরে তাঁকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে লুবানা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তিনি প্রয়াত চিত্রনায়ক জসীমের পুত্র হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

জাহানারা ভূঁইয়া
দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। ডায়াবেটিসের কারণে তাঁর দুটি কিডনিই অচল হয়ে যায়।
সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি জাহানারা ভূঁইয়া গীতিকার, নির্মাতা এবং প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। এ দেশে নারী চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম তিনি।

জেনস সুমন
২৮ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মারা যান জেনস সুমন। কর্মজীবনে ২০০২ সালে বিটিভির একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রচারের পর সাড়া ফেলে ‘একটা চাদর হবে’ গানটি। রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন গানটির গায়ক জেনস সুমন। তারপর ‘আকাশ কেঁদেছে’, ‘অতিথি’, ‘আশবাদী’, ‘আয় তোরা আয়’, ‘চেরী’সহ আরও বহু গান উপহার দিয়েছেন তিনি।

শেখ নজরুল ইসলাম
১৬ নভেম্বর মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ নভেম্বর মারা যান নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম। রাতেই তাঁর মরদেহ নাটোরে নেওয়া হয়। পরদিন সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

সাঙ্কু পাঞ্জা
ক্যান্স্যারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা সাঙ্কু পাঞ্জা মৃত্যুবরণ করেন গত ২৯ মে। বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বহু চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে নিজের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছিলেন।

তানিন সুবহা
২ জুন বুকে ব্যথা নিয়ে তানিন সুবহাকে বনশ্রীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১০ জুন চিকিৎসকরা জানান, সুবহার হৃদযন্ত্র কিছুটা সচল থাকলেও তাঁর মস্তিষ্ক আর কাজ করছিল না। ফলে তাঁকে ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করা হয়।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/oh6c
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন