সার্বিয়ার ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। সেই অবস্থানের জেরে সরকারি রোষের মুখে পড়েন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। এবার সবকিছু পেছনে ফেলে সার্বিয়া ছেড়ে গ্রিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন তিনি—এমনটাই জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় গণমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল জানিয়েছে, কিছুদিন আগেই গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে বসবাস শুরু করেছেন জোকোভিচ। শুধু তাই নয়, তার দুই সন্তান—ছেলে স্টেফান ও মেয়ে তারা—কে ভর্তি করিয়েছেন শহরের স্বনামধন্য সেন্ট লরেন্স কলেজে। এছাড়া এথেন্সের দক্ষিণাংশে স্থায়ীভাবে একটি বাড়ি কিনেছেন তিনি।
সম্প্রতি জোকোভিচকে ছেলের সঙ্গে দেখা গেছে এথেন্সের কাভুরি টেনিস ক্লাবে খেলতে। গুঞ্জন উঠেছে তিনি গ্রিসের গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার লক্ষ্যে আবেদন করছেন।
উল্লেখ্য গ্রিসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলেই এই ভিসার অধিকার পাওয়া যায়। এমনকি তিনি ইতোমধ্যে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন বলে জানা গেছে। ফ্রান্সের মোনাকোতেও রয়েছে জোকোভিচের সম্পত্তি।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সার্বিয়ার নোভি সাদ রেল স্টেশনে একটি ক্যানোপি ধসে পড়ে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়। শুরু থেকেই সেই আন্দোলনের প্রকাশ্য সমর্থক ছিলেন জোকোভিচ।
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার যুব সমাজের প্রতি বিশ্বাস আছে। উন্নত ভবিষ্যতের জন্য তাদের কথা শোনা অত্যন্ত জরুরি। তারা এই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর তিনি সেই শিরোপা উৎসর্গ করেন এক আন্দোলনকারী ছাত্রকে, যিনি একটি দুর্ঘটনায় মারা যান। এমনকি বেলগ্রেডে এক বাস্কেটবল ম্যাচে ‘স্টুডেন্টস এন্ড চ্যাম্পিয়নস’ লেখা টি-শার্ট পরে গিয়েও বার্তা দেন আন্দোলনের পক্ষে।
জোকোভিচের এই অবস্থান সহজভাবে নেয়নি সার্বিয়ার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচের সমর্থকগোষ্ঠী। বিভিন্ন সরকারি ঘরানার সংবাদমাধ্যম তাকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক প্রচার শুরু করেছে। তাকে সরকারের বিরোধিতা করার ‘মূল হোতা’ বলেও আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
ফলে নিজের দেশের মাটিতে এখন জোকোভিচ যেন একরকম অপাংক্তেয় চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। তবে তাতে দমে যাননি তিনি। দেশান্তর করেই নিজের মতাদর্শে অটল থেকে নতুন জীবনের শুরু করেছেন গ্রিসে।
এখন শুধু কোর্টে নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে থেকেও জোকোভিচ দেখাচ্ছেন সাহসিকতার এক নতুন রূপ।