English

17 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
- Advertisement -

এত টাকা দিয়ে কী করেন ইলন মাস্ক?

- Advertisements -

টেসলার বস ইলন মাস্ক কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং তার এই সম্পদ আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে যখন তিনি অর্ধ ট্রিলিয়ন বা ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক হন। এরপরেও সাধারণ জীবনযাপনের করেন বলে দাবি ইলন মাস্কের।

২০২১ সালে তিনি জানিয়েছিলেন যে, টেক্সাসে যে বাড়িতে বাস করেন তার দাম ৫০ হাজার ডলার। তার সাবেক সঙ্গিনী গ্রাইমস ২০২২ সালে ভ্যানিটি ফেয়ারে বলেছিলেন, অনেকে যেমন মনে করে মাস্কের জীবনযাপন তেমন বিলাসবহুল নয়। গ্রাইমস ও মাস্কের দুই সন্তান রয়েছে।

মাস্ক বিলিওনিয়ারের মতো জীবনযাপন করেন না। তিনি মাঝে মধ্যে দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন।একসময় গ্রাইমস বলেছিলেন, ম্যাট্রেসের এক দিকে গর্ত হয়ে যাওয়ার পরেও মাস্ক নতুন একটি কিনতে রাজি হননি।

মাস্কের জীবনধারা লোকজনের ধারণার মতো বিলাসবহুল না হলেও তিনি গাড়ির প্রতি তার ভালোবাসা অন্য রকম। এরমধ্যে একটি আছে যা সাবমেরিনে রূপ নিতে পারে। তার কিছু ব্যক্তিগত বিমানও রয়েছে, যার মূল্য কয়েক মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে তিনি মাত্র ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনে নিয়েছিলেন, যা এখন এক্স নামে পরিচিত।

সম্প্রতি ইলন মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন (১০০০ বিলিয়ন) ডলারের একটি পারিশ্রমিক প্যাকেজ আলোচনা তৈরি করেছে, যেটি শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন পেয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তবে ওই প্যাকেজ পাওয়ার শর্ত হিসেবে তাকে আগামী ১০ বছরে টেসলার বাজারমূল্য ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে।

যদি তিনি এসব অর্জন করেন এবং নির্দিষ্ট বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণ করেন, তবে ৪০০ মিলিয়নের বেশি অতিরিক্ত টেসলা শেয়ার দেওয়া হবে তাকে যার মূল্য কোম্পানির বাজারমূল্য যথেষ্ট পরিমাণে বাড়লে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে।

বিলাসবহুল প্রাসাদ, যা বিক্রি করেছিলেন
ইলন মাস্কের একসময় উল্লেখযোগ্য রিয়েল এস্টেট সম্পদ ছিল। ২০১৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায় যে সাত বছরে তিনি সাতটি বাড়িতে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন।

এগুলো ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার অভিজাত বেল-এয়ার এলাকায়। এসব সম্পদের মধ্যে ছিল সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি, ওয়াইন সেলার এবং বলরুম।

একটি র‍্যাঞ্চ হাউজ ছিল যার একসময় মালিক ছিলেন খ্যাতিমান উইল ওয়াঙ্কা অভিনেতা জিন ওয়াইল্ডার।
কিন্তু ২০২০ সালে মাস্কের মনে পরিবর্তন আসে। তিনি টুইট করে জানান যে সব স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দেবেন এবং নিজের মালিকানায় কোনো বাড়ি তার থাকবে না।

তিনি বলেন, নগদ অর্থের প্রয়োজন নেই। আমি নিজেকে মঙ্গল ও পৃথিবীর জন্য উৎসর্গ করেছি। সম্পত্তি কেবল আপনাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। তবে শর্ত ছিল যে জিন ওয়াইল্ডারের বাড়ি ধ্বংস করা যাবে না।

শেষ পর্যন্ত বাড়িটি তিনি বিক্রি করেন ওয়াইল্ডারের ভাতিজা জর্ডান ওয়াকার পার্লম্যানের কাছে, যাকে তিনি বাড়িটি কেনার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলাররের ঋণও দিয়েছিলেন।

২০২১ সালে মাস্ক টুইট করেছিলেন যে তার মূল বাড়িটি ৫০ হাজার ডলার মূল্যের। এটি টেক্সাসের দক্ষিণে এবং স্পেসএক্স যেখান থেকে পরিচালিত হয় তার কাছে। এলাকাটি এখন স্টারবেস নামে পরিচিত।

এটা আসলে দারুণ- মাস্ক তার বাড়ি সম্পর্কে বলেছিলেন। পরের বছর মাস্ক বলেছিলেন যে তিনি আর কোনো বাড়ির মালিক নন। বিপুল সম্পদ থাকার পরেও তিনি কতটা সাধারণ জীবনযাপন করেন সেটিই তিনি তুলে ধরেছিলেন।

মিডিয়া অর্গানাইজেশন টেড-এর প্রধানকে মাস্ক বলেছিলেন, আমি আসলে বন্ধুদের বাড়িতে থাকি। আমি যদি বে এরিয়ায় যাই, যেখানে টেসলার বেশিরভাগ কাজ হয়, তাহলে ঘুরেফিরে বন্ধুদের অতিরিক্ত শোবার ঘরে থাকি।

তবে এটা নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালে গুগলের তখনকার সিইও ল্যারি পেজ লেখক অ্যাশলি ভ্যান্সকে বলেছিলেন যে মাস্ক ‘এক ধরনের বাস্তুহীন। তিনি ই-মেইল করে বলবেন যে আজ রাতে কোথায় থাকবো জানি না। তোমার বাড়িতে আসতে পারি?

কয়েক বছর ধরে জল্পনাকল্পনা ছিল যে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সম্পদ কিনছেন। যদিও টেক্সাসের বাড়িটিই মনে হচ্ছে একমাত্র বাড়ি যার মালিক তিনি।

অসাধারণ সব গাড়ি
ইলন মাস্ক সম্পত্তি কেনাবেচায় বড় অঙ্কের টাকা খরচ করেন না, কিন্তু গাড়ির ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। টেসলার মালিক হিসেবে তার কাছে অসাধারণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিস্ময়কর বলা চলে এমন সব গাড়ির একটি বড় সংগ্রহ আছে।

এই সংগ্রহশালায় রয়েছে ফোর্ড মডেল টি-২০শ শতকের সেই গাড়ি যেটিকে প্রথম সাশ্রয়ী মূল্যের যান হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং যা মোটর শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছিল।

আরো ছিল ১৯৬৭ সালের জাগুয়ার ই-টাইপ রোডস্টার যেটি মাস্ক ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করতেন বলে জানা যায়।

১৯৯৭ সালের ম্যাকল্যারেন এফ-ওয়ান, যেটি তার হাতে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরে তা মেরামত করতে বিপুল অর্থও ব্যয় করেন, এরপর বিক্রি করে দেন।

একটি টেসলা রোডস্টার, যা ছিল টেসলার প্রথম বাজারজাত মডেল এবং ২০১৮ সালে মাস্ক সেটিকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে আলোচনায় আসেন।

তবে সবচেয়ে অদ্ভুত গাড়িটি ছিল ১৯৭৬ সালের লোটাস এসপ্রিট, যা ১৯৭৭ সালের ‘দ্য স্পাই হু লাভড মি’ চলচ্চিত্রে জেমস বন্ড চালিয়েছিলেন। ওই সিনেমায় ‘ওয়েট নেলি’ নামে পরিচিত এই গাড়িটি পানির নিচে সাবমেরিনে রূপান্তরিত হতে পারতো।

মাস্ক ২০১৩ সালে প্রায় ১০ লাখ ডলারে একটি নিলামে গাড়িটি কেনেন, তার লক্ষ্য ছিল সাবমেরিনে রূপান্তরের সেই ক্ষমতাকে আবার বাস্তবে রূপ দেওয়া।

উড়ে উড়ে কাজে যাওয়া
ইলন মাস্ক স্বীকার করেছেন, বিমান হচ্ছে আরেকটি খাত যেখানে তিনি টাকা ঢালতে আগ্রহী, তবে তার দাবি-এটি তার কাজের প্রতি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, আমি যদি বিমান ব্যবহার না করি, তাহলে আমার কাজের সময় কমে যায়।

তার ব্যক্তিগত জেটের সংগ্রহে রয়েছে একাধিক গালফস্ট্রিম মডেল, যার প্রতিটির দাম কয়েক কোটি ডলার।
তিনি এগুলো ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রে স্পেসএক্স ও টেসলার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রেও।

অপ্রচলিত দান?
যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নথি অনুযায়ী, মাস্ক বিলিয়ন ডলারের শেয়ার দান করেছেন বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় এবং নানা উদ্যোগে বহু মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তার দান নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে।

গত বছর নিউ ইয়র্ক টাইমস মন্তব্য করে-এটি অগোছালো এবং মূলত স্বার্থপর যা তাকে বিপুল কর ছাড়ের যোগ্য করে তোলে এবং তার ব্যবসায়িক স্বার্থকেই সহায়তা করে।

তার দাতব্য সংস্থা মাস্ক ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, তারা ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সাহসী প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানব অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

তবে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, তিন বছর ধরে সংস্থাটি যে পরিমাণ অর্থ দান করার কথা ছিল, তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পত্রিকাটি সংস্থার কর সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, তাদের অনেক অনুদানই গেছে এমন সংস্থায়, যেগুলোর সঙ্গে মাস্কের যোগসূত্র রয়েছে। ইলন মাস্ক এবং মাস্ক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।

পূর্বে দান ও দাতব্য উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাস্ক ঐতিহ্যবাহী দানের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। ২০২২ সালে ক্রিস অ্যান্ডারসনকে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আপনি যদি ভালো কাজের উপলব্ধির চেয়ে এর বাস্তবতা সম্পর্কে বেশি চিন্তা করেন, তাহলে জনহিতকর কাজ অত্যন্ত কঠিন।

মাস্কের কাছে তার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর অস্তিত্বই দান। আপনি যদি বলেন দান মানে মানবতার প্রতি ভালোবাসা, তাহলে এগুলোই দান- জোর দিয়ে বলেন তিনি।

তিনি বলেন, টেসলা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটাচ্ছে আর স্পেসএক্স মানবজাতির দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছে এবং নিউরালিঙ্ক মস্তিষ্কের আঘাত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্বগত ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করছে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/q4fe
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন