পাহাড় কাটা আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু কোথাও সে আইনের প্রয়োগ নেই। প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা হচ্ছে। কখনো দিনে, কখনো রাতে।
পাহাড়ের মাটি চলে যাচ্ছে ইটখোলায় কিংবা নিচু জমি ভরাটের কাজে। এর জন্য গড়ে উঠেছে নানা ধরনের চক্র। তারা সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের পাহাড়ে হানা দিচ্ছে। মাটি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই সেসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে। সেখানে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে ‘টু ব্রাদার বাহিনী’। স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় তারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
দেশে যেখানে পাহাড় আছে, সেখানেই গড়ে উঠেছে পাহাড়খেকো নানা রকম চক্র। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর সিলেটের পাহাড় কাটা নিয়ে নিকট অতীতে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হয়ে দিন দিন আরো অবনতিই হচ্ছে। নবীগঞ্জের পাহাড় কাটা নিয়েও অতীতে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট প্রকাশিত এমন একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছিল।
সেই বছরের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পাহাড় কাটার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছিলেন। রায়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশও মানা হচ্ছে না। দিনে-রাতে সমানে চলছে পাহাড় কাটা। টু ব্রাদার চক্রটি এতই শক্তিশালী যে স্থানীয় মানুষ তাদের ভয়ে ভীত থাকে। ব্যক্তিমালিকানাধীন টিলা কেটে মাটি নিলেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। ২০১৬ সালে এখানে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটিচাপা পড়ে দুই শ্রমিক মারাও গিয়েছিলেন। এর পরও প্রশাসন কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না, স্থানীয় মানুষের কাছে তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে আছে।
দু-একবার তাদের ট্রাক, মাটি কাটার যন্ত্র জব্দ করা হলেও পরে কিভাবে যেন তারা সেসব ফেরত পেয়ে যায়।১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় হোক, টিলা হোক—সেগুলো কাটা নিষিদ্ধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন যদি না থাকে, তাহলে এমন আইন থেকেই বা লাভ কী? আমরা চাই, হবিগঞ্জে যারা টিলা কেটেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/rai5