English

27.2 C
Dhaka
শুক্রবার, জুলাই ১১, ২০২৫
- Advertisement -

স্ত্রীর ইচ্ছে পূরণে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে

- Advertisements -

বগুড়ার শেরপুর শহরের করতোয়া নদী সংলগ্ন হরিতলা কালিমাতা মন্দির প্রাঙণে এক যুগ আগে একটি পাকুড় ও একটি বটগাছ লাগিয়েছিলেন রিনা রানী দাস। স্থানীয় গোসাইপাড়া এলাকার প্রদীপ দাসের স্ত্রী তিনি। এই দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না। নিঃসন্তান হওয়ায় ওই গাছ দু’টিকে সন্তানের মতোই পরিচর্যা করছিলেন তিনি। তাই বট ও পাকুড় গাছ একত্রে বেড়ে উঠতে থাকে।

ইচ্ছে ছিল গাছ দু’টি বড় হলে মা হিসেবে মহা ধুমধামে তাদের বিয়ে দিবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। গত বছর পরলোক গমন করেন রিনা রানী দাস। তবে তার ওই ইচ্ছে পূরণে পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (১২ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো বট-পাকুড় গাছ দু’টির বিয়ে।

পৌরসভার থানা রোড সংগলগ্ন হরিতলা কালীমাতা মন্দির প্রাঙণে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। বটগাছটিকে কনে এবং পাকুড়গাছটিকে বর মেনে সনাতন ধর্মীয় রীতিতে যেভাবে মানুষের বিয়ের আয়োজন করা হয়, ঠিক সেভাবেই বিয়ের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই বিয়ের আয়োজনে কোনো কিছুরই যেন কমতি নেই।

অয়োজনে করতে চারদিকে রঙিন কাপড় দিয়ে করা হয় সাজসজ্জা। বাদ যায়নি রঙিন বাতির আলোকসজ্জা। অতিথিদের দেওয়া হয়েছে নিমন্ত্রণপত্র। এছাড়া আমন্ত্রণ জানিয়ে শহরজুড়ে মাইকযোগে প্রচারণাও চালানো হয়। তাঁদের আপ্যায়নে রাখা হয় নিরামিষ খাবার। সনাতন ধর্মালম্বীদের রীতি অনুযায়ী গায়ে হলুদ, আদিশ্রাদ্ধ, অধিবাস, বিয়ের আয়োজনের কোনো কিছুর যেনো কমতি  নেই। তাই চারদিকে বাজানো হয় সানাইয়ের সুর। উলুদ্ধনী দেন শতশত নারীরা। পুরোহিত পাঠ করেন মন্ত্র। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর। সকাল থেকেই শুরু হয় ওই বিয়ের কার্যক্রম, চলে রাত পর্যন্ত।

শাস্ত্র অনুযায়ী, বিয়েতে কনের বাবা হিসেবে প্রদীপ দাস কন্যাদান করেন আর ছেলের বাবা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিমল দাস। মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত অমিত তরফদার হোদল। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে ভিড় করেন অনেকেই।

এসময় কথা হয় রিনা রানী দাসের স্বামী প্রদীপ দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল, মারা যাওয়ার আগে সন্তানের মতো লালন-পালন করা বট ও পাকুড় গাছ দু’টির বিয়ে দেবেন। এজন্য দিন তারিখও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তিনি মারা যাওয়ায় সেটি করা সম্ভব হয়নি। তবে এক বছর পর হলেও তাঁর ইচ্ছে পুরণে ওই গাছ দু’টির বিয়ের আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত রিনার বোন রানু দাস, গীতা রানী দাস ও  গোলাপী রানী দাস বলেন, আমার ওই বোনের কোনো সন্তান ছিল না। তিনি এই গাছ দুটি রোপন করেন। পাশাপাশি নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করতেন। মা হিসেবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়েও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মারা যাওয়ায় সেটি করতে পারেননি। তাই বোনের ইচ্ছে পুরণ ও তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় মহা ধুমধামেই বট ও পাকুড় গাছ দু’টির বিয়ে দিলাম।

পুরোহিত অমিত তরফদার হোদল বলেন, যুগ যুগ থেকেই বট ও পাকুর বা আমলকি গাছের বিয়ের রীতি প্রচলিত আছে। এটি শুধু মাত্র বিয়ের আয়োজন নয়, এই বিয়ের উদ্দেশ্যে হলো বৃক্ষরাজদের রক্ষা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। প্রকৃতির প্রতি প্রেম বা শ্রদ্ধা থেকেই এমন আয়োজন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/0si4
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন