English

29 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

মহাস্থানগড়ের আড়াই হাজার বছর আগের স্থাপত্য সন্ধানে খনন কাজের উদ্বোধন

- Advertisements -

অতীত সভ্যতার লীলাভূমি বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে আড়াই হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য সন্ধানে জাদুঘর এলাকার বৈরাগীর ভিটা প্রতি বছর শীতকালীন সময় খনন কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত ২ বছর যাবৎ করোনা মহামারি কারনে খনন কাজ বন্ধ। আগে বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথভাবে নিদর্শনের সন্ধানে খননকাজ চলতো।

মহামারি করোনা পাশ কাটিয়ে এবার বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর এর অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা এই খনন কাজ শুরু করছেন। এবার কোন বিদেশি নিয়োগ নেই।

জানা যায়, পুরাকীর্তি স্থাপত্য সন্ধানে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিকবিদ কে এন দীক্ষিত ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ সালে প্রথম খনন কাজ শুরু করে ছিলেন।

Advertisements

১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খননকাজ পরিচালনা করে আসছেন। পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিজস্ব অর্থায়নে খনন করেন।

খননের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের প্রথমে মঙ্গলবার (১মার্চ) সকাল ৯টায় মহাস্থানগড় জাদুঘর এর দক্ষিণপাশে বৈরাগী ভিটা নামক ঢিবিতে খননকাজের উদ্বোধন করেন, রাজশাহী ও রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছাঃ নাহিদ সুলতানা।

কি উদ্দেশ্যে খনন কাজ করা হচ্ছ? জানতে চাইলে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের এই পরিচালক ড. মোছাঃ নাহিদ সুলতানা জানান, প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য খুঁজে বের করে স্থান, বস্তু চিহ্নিতকরণ ও নথিভুক্তকরণ এবং বস্তু ও কাঠামোর বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ ও তা জনসমক্ষে উপস্থাপন করায় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ অর্থাৎ আমাদের মূল উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়, এখানে খননের সময় যদি কোনো প্রত্নবস্তু পাই সেটি কিভাবে পেলাম, সেটি কোন সময়ের হতে পারে, তার ওজন কত, তার উচ্চতা, তার রং কি, তার নাম, কতটুকু মাটির নিচে পেলাম, কোন অঞ্চলের, এভাবে খুঁটিনাটি সব উল্লেখ থাকবে।

খননকাজে কত জন শ্রমিক কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত স্থানীয় ১৫/২০ জন শ্রমিক রয়েছে। এরা অনেক আগে থেকেই এই খননকাজ করেন। খনন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দেশীয় যন্ত্ৰাংশ খাইতি, কুর্ণী, কোদাল ও ব্রাশ। তিনি আশাবাদী যে উৎখনন শুরু করলে এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর ও স্থাপত্যের সন্ধান সহজে পাওয়া যাবে।

একটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমান বৈরাগীর ভিটা খনন প্রস্তুতি স্থানের পাশে ২০১৭ সালে খননের পর প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন মেলে। ওই খনন স্থানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে খননকালে ৮টি কূপের সন্ধান মিলেছিল। পাশাপাশি বেশকিছু মৃৎ পাত্র, মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ, মাটির বড় একটি ডাবর (মটকা) পাওয়া যায়।

Advertisements

খননস্থলে পাওয়া স্থাপত্য কাঠামো ও উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র (এনবিপিডাব্লিউ) দেখে খননকাজে নিয়োজিতদের ধারণা ছিল এসব খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে পরবর্তী ১৪০০-১৫০০ শতকের। এছাড়াও ৬ফুট খননে ৪৬ সারি ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপের সন্ধানও মিলে।

সেই হিসাবে ধারনা করা হয় ১৩০০ বছর আগে এ অঞ্চলে ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপ থেকে মানুষ পানি সংগ্রহ করে ছিলেন। মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা বলেন, মহাস্থানগড় সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি নগন হলো মহাস্থানগড়। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত। যেকারনে এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল।

প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভিতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। এই পুরাকীর্তির ইতিহাস সন্ধানে পূর্বের মতোই বৈরাগীর ভিটা খননকাজের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ তার প্রথম দিবসে উদ্বোধন করা হলো। রাজিয়া সুলতানা আরও বলেন, খননকালে প্রত্নস্থান থেকে আমরা যদি কোন প্রকার প্রত্নবস্তুু পাই সেটাকে নানা প্রকার পদার্থ দ্বারা এটিকে তার সাথে মানানসই করে সেটি সংরক্ষণে ঊর্দ্ধোতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শক্রমে কোন একটি জাদুঘর বা প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় জায়গায় রাখি।

প্রায় ১ মাসের লক্ষ্য নিয়ে এই উৎখনন সম্পাদনের কাজ শেষ করা হবে। দেশবাসীর জন্য বিশেষ একটি চমক রয়েছে বলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, মহাস্থানগড় থেকে ৩বছরে উদ্ধার হওয়া প্রত্ন নিদর্শন দিয়ে মার্চ মাসের শেষের দিকে মহাস্থানগড় এই বৈরাগী ভিটায় দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত একটি প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। যা বর্তমান প্রজন্মরা দেখে আকৃষ্ট হয়ে এর ইতিহাস জানতে উদ্বুদ্ধ হবে। খনন উদ্বোধন আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর প্রধান নকশা অঙ্কনকারী, আফজাল হোসেন মন্ডল, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী কাস্টোডিয়ান, এস, এম হাসানাত বিন ইসলাম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আলোকচিত্রকর, আবুল কালাম আজাদ, মোঃ মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া প্রমূখ।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন