অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা নতুন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, নারীরা পুরুষদের তুলনায় ক্লিনিক্যাল বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার জেনেটিক বা বংশগত ঝুঁকিতে প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
বুধবার প্রকাশিত এই গবেষণাটি ভবিষ্যতে বিষণ্নতা নিরাময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সামা টিভি।
অস্ট্রেলিয়ার বার্ঘোফার মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের দেহে বিষণ্নতার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগত সূচকের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
গবেষক জোডি থমাস বলেন, ‘বিষণ্নতায় জিনগত প্রভাব নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে স্পষ্টতই বেশি।’
তিনি আরও জানান, পুরুষ ও নারীর মধ্যে মিল ও পার্থক্যপূর্ণ জিনগত কারণগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করা গেলে বিষণ্নতার উৎপত্তি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে, যা ভবিষ্যতে ব্যক্তি-নির্ভর চিকিৎসা নির্ধারণে সহায়ক হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, বিষণ্নতা নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় বেশি, কিন্তু এর জৈবিক কারণ এতদিন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি।
গবেষণায় নারীদের শরীরে প্রায় ১৩ হাজার জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করা হয়েছে, যা বিষণ্নতার সঙ্গে সম্পর্কিত—অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এর মধ্যে কিছু জিনগত পার্থক্য দেহের বিপাকক্রিয়া ও হরমোন উৎপাদনের মতো জৈবিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
থমাস বলেন, ‘এই পার্থক্যগুলো সম্ভবত ব্যাখ্যা করতে পারে কেন বিষণ্নতায় আক্রান্ত নারীরা ওজন পরিবর্তন বা শক্তি-ঘাটতির মতো বিপাকীয় উপসর্গ বেশি অনুভব করেন।’
গবেষক ব্রিটানি মিচেল বলেন, এই ফলাফল নারীদের বিষণ্নতার চিকিৎসাপদ্ধতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, এতদিন পর্যন্ত বিষণ্নতা নিয়ে করা অধিকাংশ গবেষণাই পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের ওপর বেশি কেন্দ্রিত ছিল এবং নারীদের জিনগত প্রভাব নিয়ে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি।
মিচেল আরও বলেন, ‘এই গবেষণা প্রমাণ করছে যে, বিষণ্নতার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের জিনগত প্রতিক্রিয়া আলাদা—তাই ভবিষ্যতের ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিও হতে হবে আলাদা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ক্লিনিক্যাল বিষণ্নতা বা প্রধান বিষণ্নতা বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে সাধারণ মানসিক অসুস্থতার একটি। বর্তমানে পৃথিবীতে তিন শতাধিক কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন বলে ধারণা করা হয়।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস-এ।