সিলেটে হোটেল ব্রিটানিয়া থেকে ৯ প্রবাসী উধাও হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় সিলেটের লামাবাজার হোটেল লা-ভিস্তা’র অভ্যন্তরে লন্ডন ফেরত এক প্রবাসীর বিয়ে করার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের নিয়ম ভেঙ্গে হোটেলেই বিয়ের আয়োজন করেছেন যুক্তরাজ্য ফেরত ওই প্রবাসী।
গত ২০ মার্চ রাতে ঘটা করে বাইরে থেকে কনে এনে হোটেলে বিয়ে করেন ওই প্রবাসী। বিয়ের এ আনুষ্ঠানিকতা রাত ৮ টার পর শুরু হলেও একই হোটেলেই ‘এঙ্গেজমেন্ট’ অনুষ্ঠান হয় ১৮ মার্চ বিকেলে। চলে খানাপিনা এবং হয় বর-কনের ফটোসেশন।
এদিকে দেশে যখন চলছে ফের করোনার ভয়াবহতার পূর্বাভাস তখন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসিদের সাথে যোগসাজশ করে এমন ঘটা করা বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে এরই মধ্যে সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায় গত ১৮ ই মার্চ লন্ডন থেকে সিলেট আসা যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনকে নগরীর লামাবাজারস্হ হোটেল লা- ভিস্তায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে দুজন হলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাঙ্গাইলের বাসিন্দা এক নারী (৪৮) ও তার ছেলে (২৮)। হোটেলে মা অবস্থান করেন ৪০১ নাম্বার কক্ষে এবং তার ছেলে অবস্থান করেন ৪০৬ নম্বর কক্ষে।
নিয়ম অনুযায়ী তারা সব ধরনের জনসমাগম এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নির্ধারিত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার কথা থাকলেও তার তোয়াক্কা করেনি তারা। বরং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালনরত অবস্থায় হোটেল লা- ভিস্তায় স্টেজ সাজিয়ে অনুষ্ঠান করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারলেন ওই যুবক(২৮)। অনুষ্ঠানে বাইরে থেকে অংশ নেন আরো ৬০ জন। অনুষ্ঠান শেষে হোটেলের রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ায় অংশগ্রহণ করেন তারা।
সূত্র জানায়, ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বাইরে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন বিপনিবিতান থেকে কেনাকাটাও করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা যুক্তরাজ্য প্রবাসি যুবকের মা। যার পুরোটাই হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে। বিনিময় হোটেল কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা আদায় করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সোমবার সন্ধ্যায় হোটেল লা- ভিস্তায় যোগাযোগ করা হলে হোটেল অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ পুরো ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, এমন কোন ঘটনাই হয়নি। বিয়ের পর কনে ৪০৬ নম্বর কক্ষেই বরের সাথে অবস্থান করছেন এমন তথ্য জানিয়ে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন ব্যবস্থাপক।
তবে পুরো ঘটনা পরিস্কার হয়ে গেলে লা-ভিস্তা হোটেলের ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ কিছুটা স্বীকার করে বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠান এটা ভুল। তবে আকদ হয়েছে (বিবাহ রেজিস্ট্রি)। এজন্য কাজীসহ ৪ থেকে ৫ জন মানুষ এসে তারা কেবল স্বাক্ষর নিয়েছেন। মূলত মানবিক দিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা এ ধরনের তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও বিষয়টি দেখছে। তারা তো শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি গ্রহণ করেছিলেন। এখন ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।