English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

কন্যাকুমারী ও কেরালা ভ্রমণ পরিকল্পনা

- Advertisements -

নাসিম রুমি: কন্যাকুমারী ও কেরালা, দক্ষিণ ভারতের অপুর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি প্রদেশ!
কন্যাকুমারী যদিও নিয়ে একটা প্রদেশ নয়, এটি তামিলনাড়ুর মধ্যে পরেছে। বরফ ছাড়া কি নেই এই দুই প্রদেশে? পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, ওয়াইলড লাইফ (বন্য প্রকৃতি), সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, মাতাল বাতাস, ছোট আর মাঝারি পাহাড়ে দিগন্ত ছোয়া চা বাগান, চকলেট, কফি, মসলা, ওষধীসহ আরো বহু রকমের ফলের বাগান, নদী, ঝর্ণা, খাল, বিল আর মাছের আধার। এই সব, সবকিছু একইসাথে পেতে পারেন, ভারতের এই দুই প্রদেশে ভ্রমণের মাধ্যমে।

যদিও এই দুটি প্রদেশে একসাথে ভ্রমণ করা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু কেউ যদি সময় ম্যানেজ করতে পারেন তবে আমার মতে কন্যাকুমারী আর কেরালা এই দুটি যায়গা একসাথে ভ্রমণের একটা পরিকল্পনা করতেই পারেন। শুরুতে পরিকল্পনার কথা বলি, কিভাবে কন্যাকুমারী আর কেরালা একই সাথে ভ্রমণের জন্য সাজানো যায়, সাথে সাথেই খরচের ব্যাপারটাও দিয়ে দেয়ার চেষ্টা থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরে, শুরুটা করতে পারেন কলকাতা থেকে সরাসরি কন্যাকুমারী গিয়ে সেখান থেকে। তাতে করে ভারতের একদম শেষ বিন্দু দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে, দেখতে দেখতে কেরালা হয়ে কলকাতার দিকে এগিয়ে আসা যাবে।

কলকাতা থেকে দুই ভাবে কন্যাকুমারী যাওয়ার দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া যেতে পারে। যাদের সময় কম আর অর্থের সমস্যা নেই তারা আগে থেকে বুক করে বা কেটে রাখা এয়ারে করে চলে যেতে পারেন ত্রিভুন্নাপুরাম, যদিও এটি কেরালায় অবস্থিত, কারন কন্যাকুমারীতে কোন এয়ারপোর্ট নেই। কেরালার রাজধানীতেই আপনাকে নামতে হবে। তবে এখান থেকে কন্যাকুমারী খুব বেশি দূরে নয়। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েই চলে যাওয়া যাবে কাংখিত কন্যাকুমারীতে, ভারতের শেষ বিন্দু আর তিন সমুদ্রের মহামিলন উপভোগ করতে। মোটামুটি ৪-৬ হাজার রুপির মধ্যেই ওয়ান ওয়ের এয়ার টিকেট হয়ে যাবে।

কিন্তু কারো যদি সময়ের অভাব না থাকে আর ভ্রমণ করাটা উপভোগ করে থাকে, তাহলে তার জন্য পরামর্শ এয়ারে না গিয়ে লম্বা এই পথ ট্রেনে ভ্রমণ করার। একটু আরামে যেতে চাইলে এসি কামরায়, ওরা যাকে থ্রি টায়ার বা টু টায়ার বলে, আর আরও বেশি উপভোগ ও মজা পেতে চাইলে কষ্ট করে স্লিপার ক্লাসের টিকেট করতে পারেন।

কারন প্রায় তিন দিনের লম্বা এই ট্রেন জার্নিতে পাড়ি দিতে হবে চার থেকে পাচটা প্রদেশ, যে প্রদেশ গুলোরর একটা থেকে আর একটার প্রকৃতি, পরিবেশ, মানুষ, ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃত, জীবন-যাপন একদমই আলাদা, আলাদা! ট্রেনে গেলে আর নন এসি স্লিপার ক্লাসে কষ্ট করে ভ্রমণ করলে এতো এতো বৈচিত্র উপভোগ করা যায়, যেটা বলে বা লিখে বোঝাতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তারপরেও শেষ হয়েও শেষ হবেনা যেন!

তো যেভাবে ইচ্ছে আগে চলে যেতে পারেন একদম শেষ বিন্দু কন্যাকুমারী। যেখানে দুদিন থাকতে পারেন নিজের পছন্দমত একটা হোটেলে। ১২০০-২০০০ টাকার মধ্যে বেশ ভালো মানের হোটেল পাবেন একদম মহাসমুদ্রের সাথে লাগোয়া! যেখানে শুয়ে, বসে বা গড়িয়ে গড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের সব রকমের রুপ! ইচ্ছে হলে হাটুন, বেড়ান, বিবেকানন্দ রকে গিয়ে এক বেলা কাটিয়ে আসুন, নানা রকমভাবেই দুটি দিন উপভোগ করতে পারেন, ইচ্ছে, সাধ আর সাধ্যের মধ্যেই। তবে হ্যা, আপনি যদি ভেতো বাঙালি হন, তবে বাপু কিছুটা কষ্ট সহ্য করতেই হবে। কেননা ভাত পেলেও, নিজের পছন্দমত কোন তরকারি পাবেন কিনা সেই গ্যারান্টি দিতে পারবোনা। তবে, তাজা মাছ ভাজা, নানা রকম ভাজাভুজি পাবেন সব যায়গাতেই।
কন্যাকুমারী দেখে সাধ মিটে গেলে, ট্রেন, রিজার্ভ কার বা বাসে করে চলে আসুন, কেরালার রাজধানী ত্রিভুন্নাপুরামে। আর এখানে উপভোগ করতে পারেন একই সাথে নানা রকম আভিজাত্য আর মন মাতানো নানা রকম সমুদ্র সৈকতের বিলাসী জীবন, সাধ আর সাধ্যমত। সাথে ও পাশে থাকবে নানা আকারের ছোটখাট পাহাড়, কিছু অরণ্য আর একটা অন্য রকম পরিবেশ।

এরপর যদি পাহাড়ি অঞ্চলে যেতে চান, এখান থেকেই চলে যেতে পারেন উটি বা মুন্নার এই দুই পাহাড়ি শহরের যে কোন একটায়। ট্রেন বা বাসের ওভার নাইট জার্নি করে, তারপর ট্রেন বা বাস বদলে, শেয়ার জীপ বা সেই গন্তব্যের বাসে করে চলে যেতে পারেন মুন্নার বা উটির পাহাড়ি অরণ্য ঘেরা শান্ত, স্নিগ্ধ যে কোন শহরে। যেখানে একই সাথে পাবেন রিজার্ভ ফরেস্ট, লেক, শীত শীত সকাল, চা বাগান, চকলেট আর কফির মাদকতা মাখা ফ্যাক্টরি আর বাগান, আর নিজের সময়কে নিজের সাধ্যমত উপভোগ করার সকল কিছুই।

এখানে কদিন থাকবেন সেটা বলা মুশকিল, কারন ভালোলাগা, উপভোগ আর বিলাসিতার কোন শেষ নেই, নেই বৈচিত্রের কোন অভাব। তাই দিনক্ষন বলে দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। থাকুন ইচ্ছেমত যদি সময়ের অভাব না থাকে আর সময় অল্প হলেও অন্তত দুদিন থাকতেই হবে।

ও হ্যা, মনে রাখতে হবে, এদিকে ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে হোটেল, মোটেলের খরচ কিছুটা বেশি। কারন সাধারন ভারতীয়রা এদিকে খুব একটা আসেনা, আসে তবে খুব সিলেক্টিভ কিছু মানুষ আর আসে বিদেশী পর্যটকরা আর তাছাড়া এই দিকের যারা লোকাল তারা বেশ পয়সাওয়ালা এবং একটু আরামপ্রিয় বলেও মনে হয়েছে, যে কারনে ২০০০ এর নিচে মান সম্মত হোটেল পাওয়া খুব মুশকিল।

মোটামুটি ২৫০০ থেকেই নিজের সাধ্যমত বাছাই করে নিতে হবে। এদিকে সাধারণ মানের হোটেল, খুব সাধারণ টুরিস্ট আর যেখানে সেখানে লজ বা গেস্ট হাউজ চোখে পড়েনি বলললেই চলে। এজন্যই এদিকের প্রায় সব হোটেলই একটা নুন্যতম স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে বলে দামটা একটু বেশিই।

পাহাড় থেকে এবার নেমে আসুন সমতলে। চলে আসুন কেরালার অন্যতম ঝলমলে শহর কোচিনে। বর্ষাকাল যদি হয়, তবে বিশাল বিশাল ঝর্ণা দিয়ে শুরু করুন। কত রকমের ঝর্ণা যে এদিকে আছে, জেনে বা দেখে শেষ করা যাবেনা।

তাই কাছাকাছি আর দিনে গিয়ে সন্ধার মধ্যেই ফিরে আসা যাবে এমন লোকেশনের জলপ্রপাত বেছে নিন। পরদিন চলে যান কেরালার অন্যতম আকর্ষণ ব্যাক ওয়াটার অঞ্চলে। যেখানে সমুদ্রের সাথে মিতালি করে সংযুক্ত হয়েছে অগণিত খাল, বিল আর বিসৃত এক জলের পৃথিবী। যেখানে জলের মাঝেই পেতে পারেন পাচ তারকা মানের সেবা থেকে শুরু করে চাহিদা আর সাধ্যমত নানা রকম আয়োজন। কেরালার হাউজ বোটে।
এক যায়গা থেকে আর এক যায়গায় যাওয়া যায়, একদিন, দুইদিন বা ইচ্ছেমত তার চেয়েও বেশি দিনের পরিকল্পনা করে। যার প্রায় পুরোটাই জলে ভেসে আর এক অন্য রকম ভ্রমণের সাধ নিয়ে।

জলের জীবন উপভোগ দিয়ে শেষ করুন নিজের, পরিবারের বা বন্ধুদের সাথে উপভোগ্য আর স্মৃতিময় একটা ভ্রমণ। এবার একটু ভিন্ন কিছু।

যতই ভ্রমণ করুন আর উপভোগ করুন না কেন, শেষ বেলায় একটা দিন বা একটা বেলা একটু কেনাকাটা না করলে কি হয়? তার উপর গিয়েছেন কাঞ্চিভরন আর সিল্ক শাড়ির রাজ্য কেরালা আর তামিলনাড়ুতে। তাই যদি ফেরার টিকেট যদি কোচিন থেকে হয় তাহলে কোচিন আর যদি চেন্নাই থেকে হয় তাহলে চেন্নাই।

একটি দিন বা বা বেলা, বিকেল অথবা সন্ধ্যা নিজের পকেট বা ক্রেডিট কারডকে করে দিন মুক্ত, উন্মুক্ত, হয়ে যান উদার, বধির, ভুলে যান হিসেব নিকেশ। কেনাকাটা করুন বা করতে দিন ইচ্ছেমত! এবং দিনের শেষে একজনের মন খারাপ হবেই হবে! সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন আগে, যে কার মন খারাপকে কে গ্রহণ করবেন বা পাত্তা দেবেন না।

কারন ইচ্ছেমত কেনাটাকা করতে দিলে, আপনার নিজের মন খারাপ থাকবে আর না দিলে পুরো পরিবারের মন খারাপ থাকবে! এখন কোনটা বেছে নেবেন সেটা আপনার ব্যাপার।

বাজেট? কেনাটাকা বাদ দিয়ে এমন একটা ট্রিপে ট্রেনে করলে ক্লাস ভেদে আর জনপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা করে লাগবে ১২-১৫ দিনের জন্য। আর এয়ারে করলে ৪০-৫০ হাজার জনপ্রতি। তবে হ্যা ভারতের ঘোরার একটা মজার ব্যাপার আছে, সেটা হল, “ভারতে যত বেশিদিন নিয়ে বেড়াতে পারবেন খরচ তত কম হবে! আর যত কম দিন নিয়ে বেড়াবেন খরচ তত বেশি হবে!!” খুব অদ্ভুত লাগছেনা? আসলেই তাই। কিন্তু কিভাবে? সেই গল্প বলবো আলাদা করে…।

নাসিম রুমি- সাংবাদিক,লেখক ও পর্যটক।
সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন