English

25.6 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ৭, ২০২৫
- Advertisement -

প্রতিভাবান-জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

একে আজাদ: খালিদ হাসান মিলু। কণ্ঠশিল্পী। বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে একজন প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলু। আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানের খুবই জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ছিলেন তিনি। বাংলা গানের সবচেয়ে উজ্জ্বল এই তারকাটি বড় অসময়ে ঝড়ে গেল, বাংলাদেশের সঙ্গীতাকাশ থেকে। আজ থেকে বিশ বছর আগে আমরা হারিয়েছি এই মেলোডিকণ্ঠের যাদুকর’কে। কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলু ২০০৫ সালের ২৯ মার্চ, (রাত ১২ টা ১০ মিনিটে) ঢাকার একটি হাসপাতালে, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৫ বছর। অকাল প্রয়াত এই সঙ্গীতশিল্পীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলু ১৯৬০ সালের ৬ এপ্রিল, বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার আদর্শপাড়া গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোদাচ্ছের আলী মিয়া, স্থানীয় পালাগানের সাথে জড়িত ছিলেন। বাবা গানের মানুষ হওয়ায় ছোট্ট বেলা থেকেই মিলুর গানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ জন্মায়। বাবার হারমোনিয়াম দিয়েই তাঁর গানের সাধনা শুরু হয়। পরবর্তিতে ওস্তাদ রবীন দাস, সুরেশ দাস’সহ আরো কয়েকজনের কাছে সংগীতে তালিম নেন তিনি।

১৯৭৮ সালে ‘খুলনা বেতারে’ কন্ঠশিল্পি হিসেবে তালিকাভূক্ত হন খালিদ হাসান মিলু। তখন তিনি ‘স্পার্টান’ নামে একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন।

খালিদ হাসান মিলুর প্রথম গানের ক্যাসেট বের হয় ১৯৮০ সালে। এই এ্যালবাম-এর নাম ছিল ‘ওগো প্রিয় বান্ধবী’ । তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য একক এ্যালবামগুলো হলো, ‘আহত হৃদয়’, ‘শেষ খেয়া’, ‘নীলা’, ‘প্রতিশোধ নিও’, ‘শেষ ভালোবাসা’, ‘মানুষ’, ‘অচিন পাখী’ ও ‘আমি একা বড় একা’। ডুয়েট ও মিক্স এ্যালবামের সংখ্যা অনেক।

সংগীতে নিজের প্রতিভা আরো বিকশিত করতে খালিদ হাসান মিলু, ১৯৮২ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি ক্যাসেটের পাশাপাশি মঞ্চে ও চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন।
১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, আকবর কবির পিন্টু পরিচালিত, আলী হোসেন সুরারোপিত ‘কালো গোলাপ’ চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন খালিদ হাসান মিলু। তিনি আরো যেসব চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- প্রিন্সেস টিনা খান, স্ত্রীর পাওনা, সাজা, চাঁদনি, চেতনা, চাঁদনি রাতে, মৌসুমি, হৃদয় আমার, চাকর, শাসন, হিংসা, বিক্ষোভ, স্নেহ, অন্তরে অন্তরে, হৃদয় থেকে হৃদয়, মহামিলন, শিল্পী, দেনমোহর, রাক্ষস, শতর্ক শয়তান, বাংলার নায়ক, চাওয়া থেকে পাওয়া, মহৎ, তোমাকে চাই, প্রেমপ্রীতি, ঘাত প্রতিঘাত, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, মাস্তান রাজা, পাষাণ, নারীরমন, দিল, বিদ্রোহ চারিদিকে, ভালোবাসি তোমাকে, হিংসার আগুন, অবুঝ মনের ভালোবাসা, চোখে চোখে, সাক্ষাৎ, মধুমূর্ণিমা, ঘৃণা, বাবা কেন চাকর, প্রেমের কসম, কে আমার বাবা, লাট সাহেবের মেয়ে, মহাগুরু, কে অপরাধী, আমার অন্তরে তুমি, বর্তমান, আজকের ফয়সালা, মহা সম্মেলন, সোনিয়া, বিরাজ বৌ, প্রেমের জ্বালা, নরপিশাচ, লজ্জা, লাঠি, তুমি সুন্দর, মরণ কামড়, ঝড়, আব্দুল্লাহ, শান্তি চাই, ভালোবাসার ঘর, মেঘলা আকাশ, প্রভৃতি।

খালিদ হাসান মিলু’র গাওয়া কিছু জনপ্রিয় গান- প্রতিশোধ নিও অভিশাপ দিও, ভালোবাসা দিও না…, সেই মেয়েটি আমাকে ভালবাসে কিনা, আমি জানি না…, আমার মতো এত সুখী নয়তো কারো জীবন…, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন…, সজনী আমিতো তোমায় ভুলিনি…., কতদিন দেহি না মায়ের মুখ…, যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়…, পৃথিবীকে ভালোবেসে সুরে সুরে কাছে এসে…., চারিদিকে শুধু তুমি, মৌসুমি…., শুধু একবার বলো ভালোবাসি…, সাথী তুমি আমার জীবনে…, ওগো মা তুমি শুধু মা…., আমি পাগল প্রেমে পাগল…..,
তোমাকে ভুলতে গিয়ে বার বার মনে পরে যায়….,
লিখিনি প্রেমেরই চিঠি দেইনি গোলাপ….,আব্দুল্লাহ, আমি আপনার আব্দুল্লাহ…., ইত্যাদি।

১৯৯৪ সালে ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ চলচ্চিত্রে “ভালবাসা ভালবাসা মানে না কোন পরাজয়” গানে কণ্ঠ দিয়ে খালিদ হাসান মিলু, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।

ব্যক্তিগতজীবনে খালিদ হাসান মিলু, ফাতিমা হাসান পলাশের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই ছেলে, প্রতীক হাসান ও প্রীতম হাসান দুজনেই সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানের প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলু। বাংলা গানকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে সুমধুরকণ্ঠে সুর মেলাতেন তিনি। তারুণ্যদীপ্ত প্রতিভাবান জনপ্রিয় একজন কণ্ঠশিল্পী। মিলুর দরদী কণ্ঠে গাওয়া অনেক ফোক গানও জনপ্রিয়তা পায়েছে। হানিফ সংকেত-এর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে প্রায়ই গান গাইতেন খালিদ হাসান মিলু। টেলিভিশনেও তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়।

পোশাক-পরিচ্ছদে ভীষণ স্টাইলিশ ছিলেন খালিদ হাসান মিলু। একটা নায়কোচিত ইমেজে সবসময় পারফর্মেন্স করতে দেখা যেত তাঁকে। তিনি ছিলেনও বেশ সুদর্শন।
একজন স্বল্পভাষী, নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে তাঁর সুপরিচিতি ছিল সঙ্গীতাঙ্গনের মানুষদের কাছে ।
বাংলা গানের সবচেয়ে উজ্জ্বল এই তারকাটি বড় অসময়ে ঝড়ে গেল, বাংলাদেশের সঙ্গীতজগত থেকে। অনন্তলোকে চিরশান্তিতে থাকবেন খালিদ হাসান মিলু, এই আমাদের প্রার্থণা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/tskm
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন