হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক একটি আকস্মিক ঘটনা। যখন হার্টের পেশিগুলোতে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান ধমনী (করোনারি আর্টারি) সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। ধমনীতে চর্বি জমার কারণে তৈরি হওয়া প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হার্টের পেশির সেই অংশ অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করে।
কারণ
ধমনীর ভেতরে চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থের প্লাক জমা হওয়া। এই প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধা, যা রক্তনালিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।
লক্ষণ
বুকে তীব্র ব্যথা বা চাপ, এটি বুক থেকে বাঁ হাত, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বমি, ঠাণ্ডা ঘাম, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ও অত্যন্ত দুর্বল অনুভব করা এর অন্যতম লক্ষণ।
হার্ট অ্যাটাক একটি জরুরি অবস্থা। অবিলম্বে এর চিকিৎসা প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে হার্টের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বা রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতিতে সাধারণত রক্তনালি খুলে দেওয়া (অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি) বা বিকল্প রক্তনালি তৈরি করা (বাইপাস সার্জারি) এবং ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
হার্ট ফেইলিউর
হার্ট ফেইলিউর সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা।
এর মানে এই নয় যে হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বরং এর অর্থ হলো, হার্ট শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারছে না। এটি একটি প্রগতিশীল অবস্থা, যা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার্টের পেশি দুর্বল বা শক্ত হয়ে যেতে পারে। যার ফলে এটি কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প বা গ্রহণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
কারণ
- পূর্ববর্তী হার্ট অ্যাটাক, যা হার্টের পেশিকে দুর্বল করে দেয়।
- উচ্চ রক্তচাপ, যা হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
- ডায়াবেটিস।
- হার্টের ভালভের সমস্যা।
- অ্যারিদমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)।
- কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ।
লক্ষণ
- শারীরিক কার্যকলাপের সময় বা বিশ্রামকালে শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
- পা, গোড়ালি ও পেটে তরল জমা কারণে ফোলাভাব।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
- নিয়মিত কাশি বা বুকে কফ জমা।
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধি (শরীরে তরল জমার কারণে)।
- ক্ষুধামান্দ্য ও বমি বমি ভাব।
- হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসা সাধারণত জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধের মাধ্যমে লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ এবং হার্টের কার্যকারিতা উন্নত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কিছু ক্ষেত্রে পেসমেকার, ডিফিব্রিলেটর বা গুরুতর পরিস্থিতিতে হার্ট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর—উভয়ই গুরুতর হৃদরোগ। তবে তাদের উৎপত্তি, লক্ষণ ও চিকিৎসার পদ্ধতি ভিন্ন। তাই হৃদরোগের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।