English

27.1 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ২৯, ২০২৫
- Advertisement -

তুরস্কে ভূমিকম্প: ১ কোটি মানুষকে সতর্ক করতে ব্যর্থ গুগল, নিহত অন্তত ৫৫ হাজার

- Advertisements -

২০২৩ সালে তুরস্কে সংঘটিত প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের সময় গুগলের ভূমিকম্প পূর্ব-সতর্কতা ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছিল বলে স্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সেই সময় গুগল দাবি করেছিল, তাদের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম (AEA) ভালোভাবে কাজ করেছে। কিন্তু এখন প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ভূমিকম্পের সময় অন্তত ১ কোটি মানুষ যাদের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ৯৮ মাইলের মধ্যে অবস্থান ছিল, তাদের সতর্কবার্তা পাঠানোর সুযোগ থাকলেও পাঠানো হয়েছিল মাত্র ৪৬৯টি ‘ইমার্জেন্সি সতর্কবার্তা’।

গুগল আরও জানায়, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে কম গুরুত্বের ‘সতর্ক থাকুন’ ধরনের বার্তা পাঠানো হয়েছিল, যা খুব বেশি ঝাঁকুনি না হলে ডিভাইসে স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয় না বা “ডু নট ডিস্টার্ব” মোড-এ থাকা ফোনেও শব্দ করে না।

অন্যদিকে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা — যা সাধারণভাবে “জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ কাঁপুনি” শনাক্ত হলে প্রেরণ করা হয় — সেটিই তখনকার মতো কার্যকর হয়নি।

তুরস্কে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে ভোর রাত ৪টা ১৭ মিনিটে প্রথম ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। অধিকাংশ মানুষ তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। দুই দফা ভূমিকম্পে ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং এক লাখেরও বেশি আহত হন।

গুগলের ওই সতর্কতা ব্যবস্থা সচল ছিল, তবে ভূমিকম্পের মাত্রা ও কাঁপুনির তীব্রতা যথাযথভাবে নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছিল।

গুগলের এক মুখপাত্র জানান, “প্রতিটি ভূমিকম্পের পর আমরা আমাদের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করি। এই ক্ষেত্রেও তাই করছি।”

কীভাবে কাজ করে গুগলের সতর্কতা ব্যবস্থা?
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত অসংখ্য ফোনের মধ্যকার সেন্সরের মাধ্যমে কাঁপুনি শনাক্ত করে। যেহেতু ভূমিকম্পের তরঙ্গ মাটির ভেতর ধীরে ছড়ায়, তাই কিছু সেকেন্ড আগেই সতর্কবার্তা পাঠানো সম্ভব হয়।

দুটি সতর্কবার্তা থাকে:

  • তাত্ক্ষণিক সতর্কবার্তা (Take Action): জীবনঝুঁকি আছে এমন ভূমিকম্প হলে জোর শব্দ করে ফোনে দেখায়।
  • সতর্ক থাকুন (Be Aware): হালকা কাঁপুনি হলে প্রেরণ হয়; কিন্তু ফোনে স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয় না।

তুরস্কের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকম্পটি রাতের বেলায় হওয়ায় “তাত্ক্ষণিক সতর্কবার্তা” না পৌঁছানোয় বহু মানুষ ঘুম থেকে জাগেননি এবং বিপদের মুখে পড়েন।

কী ভুল হয়েছিল?
বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত গুগলের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, প্রথম ভূমিকম্পের সময় কাঁপুনির মাত্রা ভুলভাবে ৪.৫ থেকে ৪.৯ মাত্রা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। যেখানে প্রকৃতপক্ষে সেটি ছিল ৭.৮।

পরে ওই দিনের দ্বিতীয় বড় ভূমিকম্পেও এইএ ভুল হিসাব দেয়। তখন ৮ হাজার ১৫৮টি ‘তাত্ক্ষণিক বার্তা’ পাঠানো হয় এবং প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে কম গুরুত্বের বার্তা দেওয়া হয়।

পরে গুগলের গবেষকরা অ্যালগরিদম পরিবর্তন করে প্রথম ভূমিকম্পটি নতুনভাবে সিমুলেট করে। এতে দেখা যায়, যদি ঠিকভাবে কাজ করত, তাহলে ১ কোটি মানুষকে তাত্ক্ষণিক বার্তা এবং ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে সতর্ক বার্তা পাঠানো যেত।

কলোরাডো স্কুল অফ মাইনস-এর সহকারী অধ্যাপক এলিজাবেথ রেডি বলেন, “আমি হতাশ যে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে তথ্য প্রকাশে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এটা কোনো ছোটখাটো ঘটনা নয়— মানুষ মারা গেছে।”

প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভূকম্প নেটওয়ার্কের পরিচালক হ্যারল্ড টোবিন বলেন, “এই ধরনের প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে স্বচ্ছতা রাখা অত্যন্ত জরুরি। নয়তো অনেকে ধরে নেবে গুগল করছে, আমাদের আর কিছু করার দরকার নেই।”

গুগল জানিয়েছে, AEA কোনো দেশের জাতীয় ভূমিকম্প সতর্কতা ব্যবস্থার বিকল্প নয়, বরং একটি পরিপূরক সহায়তা।

AEA বর্তমানে ৯৮টি দেশে কার্যকর রয়েছে।

বিবিসি গুগলের কাছে জানতে চেয়েছে, ২০২৫ সালের মিয়ানমারের ভূমিকম্পে AEA কেমন কাজ করেছে, তবে এর কোনো উত্তর মেলেনি।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/wg6l
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন