English

30 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

টিকটকের লোভে ভারতে পাচারের শিকার তরুণীর লাশ উদ্ধার

- Advertisements -

‘আমি গরিব মানুষ। রিকশা চালিয়ে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। আমার মেয়েকে যারা পাচার করে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার চাই। মেয়ের লাশ ফেরত চাই।’ টিকটক চক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়ে হত্যার শিকার টুম্পা আক্তারের বাবা রহিম শেখ গতকাল এমনই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে মেয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছি। সেই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে (পররাষ্ট্র) জানিয়েছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে ভারতীয় পুলিশ জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে মেয়ের লাশ দাফন করে ফেলেছে। এখন সরকার সহযোগিতা না করলে মেয়ের লাশ ভারত থেকে কীভাবে আনব ভাবতে পারছি না।’

গত ১৯ জানুয়ারি একটি বিদেশি নম্বর থেকে কল আসে রহিম শেখের মোবাইল ফোনে। কল রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভারতের গুজরাট বি-ডিভিশন বারুচ পুলিশ স্টেশনের ইন্সপেক্টর শুভেন্দু প্যাটেল পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। শুভেন্দু প্যাটেলের হিন্দি ভাষার বাংলায় রহিম শেখ বলেন, ইন্সপেক্টর তাকে বলেন, তিনি টুম্পার বাবা কি-না? উত্তরে হ্যাঁ বলার পর জানতে পারেন যে, তার মেয়েকে একটি চক্র হত্যা করেছে। ভারতের ঐ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বলেন, বারুচের ‘এনজেল স্পা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন টুম্পা। বারুচের একটি জায়গা থেকে তার (টুম্পা) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়। ঘটনার পর থেকেই ঐ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ফোন, টুম্পা পারভেজ শেখ নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (নকল) এবং আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

Advertisements

ইন্সপেক্টর শুভেন্দু প্যাটেল টুম্পার পরিবারকে জানান, মোবাইল ফোনে থাকা সব নম্বরই পরীক্ষা করে তারা দেখেছেন, লাশটি বাংলাদেশি তরুণীর। তবে তিনি টুম্পার লাশ নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছেন। না হলে ভারতেই সমাহিত করা হবে টুম্পার লাশ বলে জানিয়েছেন।

টুম্পার পরিবারিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ডেমরার হাজীনগরের জয় মোহাম্মদ নামের এক যুবককে ভালোবেসে বিয়ে করেন টুম্পা। জয় ডেমরা থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। তবে বিয়ের কয়েক মাস পরই টুম্পা জানতে পারেন, তার স্বামী মাদকাসক্ত। এর পর জয় প্রায় প্রতিদিনই টুম্পাকে মারধর করতেন। এক বছরের মাথায় মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠের পর টুম্পার ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সন্তান মেয়ে হওয়ার কারণে জয় দুই মাস তার মুখই দেখেননি বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। এরপর অনেকটা খেয়ে না খেয়েই কাটছিল টুম্পার জীবন। রিকশাচালক দরিদ্র বাবার পক্ষে সব সময় তার খোঁজ নেওয়া সম্ভব হতো না। এর পর ২০২১ সালের জুন মাসে ছয় মাস বয়সী মেয়েকে ফুপুর কাছে রেখে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান টুম্পা। যদিও টুম্পার স্বামী জয় মোহাম্মদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তিনি একটি মাদক মামলায় ২৪ দিন জেল খেটে বের হওয়ার কয়েক দিন পরই টুম্পা নিখোঁজ হয়ে যায়।

Advertisements

গতকাল পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েটির লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে তার পরিবারের লোকজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে সম্ভাব্য তথ্য দিয়েছেন। একই সঙ্গে টুম্পাকে পাচারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তথ্য দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। স্পর্শকাতরও। মেয়েটির পরিবারকে সিআইডির পক্ষ থেকে আইনগত সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি জানায়, নারী পাচারের ঘটনায় দেশে ও দেশের বাইরে ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৩৫টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে ১২ হাজার ৩২৪ ভুক্তভোগীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১২ বছরে ভারতে পাচার হওয়া ২ হাজার ৫০ জনকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৫১ জনকে ফিরিয়ে এনেছে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। গত বছর ভারত থেকে ৪৭ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন