English

24 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

সত্যি কথা বলতে আমি কিছু হতে চাইনি, শুধু বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছি: তাসনুভা

- Advertisements -

স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রথমবারের মতো একটি রেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ করেছেন ট্রান্সজেন্ডার নারী তাসনুভা আনান শিশির।  আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনি সংবাদ পাঠ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো ট্রান্সজেন্ডার সংবাদপাঠক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার জীবনের সংগ্রামের গল্প।

তাসনুভা বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু জন্মগ্রহণের পর তাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। কিন্তু তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আমাকে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে। আমাকে টিকে থাকতে লড়াই করতে হয়েছে। ভাত খাওয়ার সুযোগ পেতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এটা ছিল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সত্যি কথা বলতে আমি কোনো কিছু হতে চাইনি। আমি শুধু বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছি। সেই জায়গা থেকে আমি টিকে থাকার জন্য কাজ করেছি। কোনো কিছু হওয়ার জন্য নয়। উদ্দেশ্যটাই ছিলো খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা।’

এসএসসি-এইচএসসি ও স্নাতক পাস করে তাসনুভা এখন মাস্টার্স করছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘জনস্বাস্থ্য’ বিভাগে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার চিন্তা ছিলো পড়ালেখা করতে হবে। আশপাশে যা পেতাম সেটা নিয়েই পড়তে বসতাম। বিশেষ করে গল্পের বই বেশি পড়তাম। আমার মনে হয়- পড়ালেখা করে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা আমাকে এতোদূর নিয়ে এসেছে।’

তাসনুভার কথায়, ‘কমিউনিটি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে এখন আমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাকে নয়, আমার সম্প্রদায়কে ফোকাস করতে হবে। মানুষ যাদের দেখে নাক সিঁটকায়, যাদের দেখে মানুষ বাজে কথা বলে, যাদের মানুষ হেয় করে তাদের পরিবর্তন দরকার। তাদের জীবনযাপন, চলাফেরা, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবারে থাকার ব্যবস্থাসহ সব বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। তাহলেই এই সম্প্রদায়ে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।’

তাসনুভা জানান, ‘একটা সময় মানুষের অবহেলা, অবজ্ঞা এবং মানুষের বাঁকা চোখ দেখেছি। ভালোবাসা যে পাইনি তা নয়। কিন্তু যাদের কাছে আশা করেছি তাদের কাছে পাইনি। কিছু মানুষ সহযোগিতা করেছেন বলেই হয়তো আমি পড়ালেখা করতে পেরেছি। তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। জীবনে কিছু করার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি।’

ট্রান্সজেন্ডারের এই সংবাদ পাঠকের মতে, ‘এখন আপনারা যাদের (ট্রান্সজেন্ডার) রাস্তায় দেখেন তারা অনেক আগেই ঝরে পড়েছে। স্কুলে ভর্তির পরই তারা ঝরে পড়েছে। তাদের জীবনটা ছিলো আরও বেশি ভয়ঙ্কর। এরা দিনের পর দিন মানুষের বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছে। পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। হাঁটার জন্য মায়ের হাতে মার খেতে হয়েছে। কথা বলার ভঙ্গির জন্য বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর এসব কারণে আজ এরা রাস্তায়। তাদের নিয়ে সরকার বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এজন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের একটা হিজড়া সংস্কৃতি রয়েছে। এটা কিন্তু হাজার বছরের সংস্কৃতি। আদিকাল থেকে চলে আসছে এই প্রথা। এই প্রথার মধ্যে থেকে কেউ চাকরি করতে চায় না। যেমন- যেকোনো আনন্দের অনুষ্ঠানে তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। অর্থাৎ এই সংস্কৃতিটা ইতিবাচকভাবে তাদের কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।’

বিনোদন অঙ্গনেও অবাধ বিচরণ আছে তাসনুভার। নাচ-গান আর অভিনয়েও বেশ পারদর্শী তিনি। তার কথায়, ‘আমার হাতে ইতিমধ্যে দুটি সিনেমা আছে। একটি অনন্য মামুন পরিচালিত ‘কসাই’, অন্যটি হলো সাঈদ শাহরিয়ার পরিচালিত ‘গোল’। দুটি ছবিতে আমার চরিত্রটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। এছাড়া আরও দুটি ছবিতে কাজের কথা চলছে। আমি ভালো কিছু চরিত্রে কাজ করতে চাই।’

তাসনুভা আনান শিশিরকে পেয়ে আনন্দিত বৈশাখী টেলিভিশন পরিবার। প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক টিপু আলম মিলন বলেন, ‘এই বছরটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০২১ সালেই স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন হচ্ছে। আমাদের আগে থেকেই চিন্তা ছিলো এই বছরে আমরা কিছু করতে পারি কিনা। সেই চিন্তা থেকে ট্রান্সজেন্ডার দুইজনকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে সুযোগ দেই। আজ ৮ মার্চ তাদের দিয়ে আমরা অনুষ্ঠান করছি। ট্রান্সজেন্ডার ছাড়া অবহেলিত যারা আছে তাদের নিয়েও ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই।’

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন