লাল মাংস (যেমন গরু, ছাগল বা হরিণের মাংস) খাওয়া এখন শুধু খাদ্যাভ্যাস নয়, হতে পারে একটি প্রাণঘাতী ঝুঁকি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, একটি বিরল ধরনের অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, যার নাম অ্যাফা-গ্যাল সিনড্রোম (Alpha-gal Syndrome বা AGS)।
এই রোগ সাধারণ খাদ্য অ্যালার্জির মতো নয়। এটি হয় টিক (এক ধরনের কীট) এর কামড়ের ফলে। বিশেষ করে ‘লোন স্টার টিক’ বা ‘ডিয়ার টিক’ নামের টিক কামড়ালে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এক ধরনের চিনিজাত অণুর (গ্যালাকটোজ-অ্যাফা-১,৩-গ্যালাকটোজ, সংক্ষেপে অ্যাফা-গ্যাল) প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এই উপাদানটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যে থাকে। ফলে টিক কামড়ের কিছু মাস পর যখন কেউ লাল মাংস বা দুগ্ধজাত খাবার খায়, তখন শরীরে দেখা দেয় ভয়াবহ অ্যালার্জি।
লক্ষণগুলো অনেক সময় খাবার বিষক্রিয়ার মতো মনে হয় — চুলকানি, বমি ভাব, পেটব্যথা এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস (এক ধরনের জীবন-সংকটজনক অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া) হতে পারে। সমস্যা হলো, এই প্রতিক্রিয়া সাধারণত খাবার খাওয়ার ২ থেকে ৬ ঘণ্টা পরে দেখা দেয়, তাই রোগী কিংবা চিকিৎসক কেউই সহজে বুঝতে পারেন না সমস্যার মূল কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানায়, দেশটিতে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বিশ্বব্যাপী এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এখন এই টিক শুধু দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়; বিশ্বের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
সার্বিয়ার একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটিতে প্রথমবারের মতো এই রোগ শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ নিয়ে এখনও চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম, ফলে সঠিক রোগ নির্ণয়ে অনেক সময় লাগে। অনেক রোগী মাসের পর মাস ধরে ভুগতে থাকেন, অথচ আসল কারণটাই অজানা থেকে যায়।
এই রোগের এখনো কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, লাল মাংস, দুধ ও প্রাণীজাত উপাদান এড়িয়ে চলা এবং টিকের কামড় থেকে বাঁচা এই রোগ প্রতিরোধের মূল উপায়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় সঠিক খাদ্যনিয়ন্ত্রণে এই অ্যালার্জি ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।