বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের দিকে জুতা ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে। ৭১ বছর বয়সী ভারতের একজন আইনজীবী বিআর গাভাইকে আদালতে জুতাছুড়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির আদালতে। এ ঘটনাকে দেশজুড়ে প্রকাশ্য অবমাননা এবং নিরাপত্তার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পরই দিল্লি পুলিশ সুপ্রিম কোর্টে ছুটে যায়। পুলিশের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রাকেশ কিশোর নামে পরিচিত এই আইনজীবী বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ১ নম্বর আদালতে তার ‘স্পোর্টস জুতা’ বের করে গাভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারেন।
ঘটনার সাক্ষী তিনজন আইনজীবী বিবিসিকে জানিয়েছেন, একজনের মতে জুতাটি প্রধান বিচারপতির এবং অন্য এক বিচারপতির দিকে ছোড়া হয়েছিল। তবে জুতা তাদের পেছনে গিয়ে পড়ে।
জুতা ছোড়ার সময় রাকেশ কিশোরকে বলা শোনা গেছে, ‘ভারত সনাতন ধর্মের (হিন্দুধর্ম) অবমাননা সহ্য করবে না।’ পরে তাকে সিকিউরিটি কর্মকর্তারা আদালত থেকে বের করে নিয়ে যান। তার কাছে সুপ্রিমকোর্টের ‘প্রক্সিমিটি কার্ড’ ছিল, যা সাধারণত আইনজীবী ও আদালতের কর্মীদের দেওয়া হয়।
ঘটনার সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী রবি শঙ্কর ঝা বিবিসিকে বলেন, ‘তিনি জুতাছুড়ে মারেন এবং আবার হাত উঁচু করে দেখান যে জুতাছুড়েছেন।
’ তিনি আরো বলেন, ‘জুতা ছোঁড়ার পর যখন আদালতের নিরাপত্তা তাকে আটক করে, প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আইনজীবীদের বিচারকাজ চালিয়ে যেতে।’ অন্য আইনজীবী আনাস তানভীর জানান, ‘প্রধান বিচারপতি পুরো সময়েই শান্ত ও সংযত ছিলেন।’
প্রধান বিচারপতি নিজে এই বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হবে না।
ঘটনার পর ভারতীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে রাকেশ কিশোর বলেন, ‘এটি মূলত সেই মামলার প্রতিক্রিয়া, যেখানে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরে সাত ফুট উঁচু ভিসনু প্রতিমা পুনঃনির্মাণের আবেদন বাতিল করেছিল।
প্রধান বিচারপতি তখন বলেছেন, এটি একেবারেই প্রচারমূলক মামলা… গিয়ে ভগবানের কাছে জিজ্ঞেস করুন।’
এই মন্তব্যে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং অনেকেই অভিযোগ করেন, প্রধান বিচারপতি হিন্দু বিশ্বাসের সঙ্গে হাস্যরস করেছেন। পরে তিনি সমালোচনা স্বীকার করে বলেন, তিনি সব ধর্মের প্রতি সম্মান দেখান।
রাকেশ কিশোর দ্য প্রিন্টকে বলেন, ‘তিনি শুধু আবেদন নাকচ করেননি বরং ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে মজা করেছেন।’ তিনি আরো জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ঘুমাতে পারছিলেন না। ওই দিন প্রধান বিচারপতি এই মন্তব্য করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই জুতা আক্রমণকে ‘সম্পূর্ণভাবে নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেন এবং বলেন, এই হামলা প্রতিটি ভারতীর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের সমাজে এমন নিন্দনীয় কাজের কোনো স্থান নেই।’ ভারতে এবং অনেক দেশে জনসমক্ষে কারও ওপর জুতা ছোঁড়া অবমাননা ও তুচ্ছতা প্রকাশের চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়।