English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

ই-কমার্স: সম্ভাবনার বাজারে শঙ্কা চাই না

- Advertisements -

দেশে ‘ই-কমার্স’ নিয়ে নানামুখী আলোচনায় জনপরিসর যখন সরগরম, তখন শনিবার সমকালের সমৃদ্ধি পাতায় ই-কমার্স নিয়ে বিশেষ আয়োজন সময়োচিতই বিবেচিত হবে। এই আয়োজনে যথার্থই বলা হয়েছে যে, সার্বিকভাবে ই-কমার্স দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার নতুন মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং কিছু ব্যবসায়ীর অসাধু কর্মকাণ্ডে বিকাশমান এ খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। বস্তুত দৈনন্দিন কেনাকাটায় ই-কমার্স বা অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল ঊর্ধ্বমুখী; করোনা পরিস্থিতিতে তা স্বাভাবিকভাবেই বিপুল গতি অর্জন করেছে। গত এক বছরে এই খাতের ব্যবসায় ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে সংশ্নিষ্টরা বলছেন। আমরা দেখেছি, এ বছর কোরবানি পশুরও একটি বড় অংশ কেনাকাটা হয়েছে অনলাইনে।

Advertisements

একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় এই বাজারে শঙ্কার ছায়াও দেখতে পাচ্ছি আমরা। একসময় ই-কমার্সকে ভবিষ্যতের বাজার আখ্যা দেওয়া হলেও এখন তা নিরেট বাস্তব। যেমন ক্রেতা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে উদ্যোক্তার সংখ্যা। স্বভাবতই ‘অফলাইন’ বাজারে যেসব নেতিবাচক প্রপঞ্চ দেখা যায়, তারও ছায়া পড়েছে এখানে। বিশেষত প্রতারণা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও অনিয়মের অঘটন। অনলাইনের দেখা চটকদার পণ্য ও প্রতিশ্রুতি অফলাইনে গিয়ে গুণ ও মানে পিছিয়ে থাকার ঘটনা তো আগে থেকেই ছিল। সাম্প্রতিককালে যথাসময়ে পণ্য গ্রাহকের হাতে না পৌঁছানোর অভিযোগ বড় হয়ে উঠেছিল বৃহৎ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কারণে। বিভিন্ন খাতে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান যেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের পথ দেখায়, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সেখানে দেখা গেছে বিপরীত নজির।

Advertisements

কী কারণে এমন পরিস্থিতি, সমকালের আলোচ্য আয়োজনে তা স্পষ্ট বলা হয়েছে- কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, সরবরাহ করা পণ্যের নিম্ন মান, পণ্য পরিবর্তনের সীমিত সুযোগ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোটেও সুযোগ না থাকা, আগাম পরিশোধ করা অর্থের বিনিময়ে সময় মতো পণ্য না দেওয়া কিংবা অর্থ ফেরত না দেওয়ার মতো ঘটনা গ্রাহকের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। আমরা মনে করি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করত, তাহলে হয়তো এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেত। বিলম্বে হলেও মন্ত্রণালয় সম্প্রতি যে ‘ডিজিটাল কমার্স’ পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করেছে, আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই। এতে প্রধানত পণ্য সরবরাহ ও রিফান্ড দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশা করা যায়। আমরা দেখতে চাই, কেবল প্রশাসন নয়; ই-কমার্স খাতে কর্মরত সৎ ও প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবেন।

সাধু ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হলে অসাধুরা সুবিধা করতে পারবেন না। তবে সবচেয়ে জরুরি গ্রাহক সচেতনতা। চটকদার বিজ্ঞাপন, মূল্যছাড় ও প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট না হয়ে বাস্তবতার নিরিখে বাজারদর বিবেচনা করলে প্রতারণার ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যেতে বাধ্য। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেও সক্রিয়তা বাড়াতে হবে। ‘স্বাভাবিক’ বাজারদরেও পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সময় মান ও গুণের পরিবর্তনের যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এই সংস্থার সক্রিয়তাই যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে, ই-কমার্স নিছক বাজারের বিষয় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কর্মসংস্থানেরও বিপুল সম্ভাবনা। বিশেষত করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ বা নাজুক হয়ে পড়া কিছু কর্মক্ষেত্র ভবিষ্যতে আর পুরোনো রূপে ফিরতে নাও পারে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে ই-কমার্স।

ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের অনিয়ম ও অবিমৃষ্যকারিতায় এই সম্ভাবনা আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমরা চাই, সম্ভাবনাময় এই বাজার থেকে শঙ্কার ছায়া সরাতে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হোক। প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয়তা বাড়ূক। তবে ঢালাও অভিযানও কাম্য হতে পারে না। গোটা ই-কমার্স নিয়ে নেতিবাচক আলোচনায় এই খাতের সৎ উদ্যোক্তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে নজর রাখতেই হবে। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচিও নেওয়া জরুরি। প্রতিষ্ঠিত অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসতে পারে গ্রাহক সচেতনতা কর্মসূচি নিয়ে। যাতে করে গ্রাহকরা সহজেই আসল ও নকলের পার্থক্য বুঝতে পারেন। আমরা সম্ভাবনাময় এই খাতের বিকাশই দেখতে চাই, বেআইনি কর্মকাণ্ড কদাচ নয়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন