English

34 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

স্ত্রী মিতুকে হত্যা মামলায় স্বামী বাবুল আক্তারের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

- Advertisements -

চট্টগ্রামে ছেলেকে স্কুলে দিতে যাওয়ার পথে নৃশংস খুনের শিকার মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

১২ মে ২০২১ বুধবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহান এ আদেশ দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুল আক্তারকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত পাঁচ দিন মঞ্জুর করেছেন। আদালত থেকে বাবুল আক্তারকে পিবিআই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এর আগে, বুধবার দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাবুল আক্তারকে ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়।

প্রায় পাঁচ বছর আগে মাহমুদ খানম মিতুকে হত্যার পর বাবুল আক্তার নিজেই বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওই মামলার তদন্তভার গিয়ে পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

১১ মে ২০২১ মঙ্গলবার ওই মামলার বাদী বাবুল আক্তারকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একটি টিম তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর বুধবার সকালে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিতু হত্যা মামলায় খোদ বাদি বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

আইন অনুযায়ী বাবুল আক্তারকে আসামি করতে তার দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বুধবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। এরপর মিতুর বাবা বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় নতুন করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন, যাতে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। বাকি সাত আসামিরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও শাহজাহান মিয়া।

এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে আদালতে হাজির হন নতুন মামলাটিও তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা। আদালতে আনা-নেওয়ার সময় একসমরে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাত বাবুল আক্তারকে কখনো বিমর্ষ, কখনো নির্বিকার দেখা গেছে।

আদালতে উপস্থিত পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলাটি আমরা আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। এরপর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার স্যারের নির্দেশে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। আমরা মামলার সমস্ত তথ্যপ্রমাণ, সাক্ষীদের জবানবন্দি, আলামত বিশ্লেষণ করি। নিরবচ্ছিন্নভাবে তদন্তও শুরু করি এবং ওই মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা যাচাই করি। একইভাবে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার আগে-পরে মামলার বাদী বাবুল আক্তারের ভূমিকা ও সম্পৃক্ততার বিষয়টিও খতিয়ে দেখি।

‘সার্বিকভাবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে বাবুল আক্তার নিজে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। এছাড়াও তার কয়েকজন সহযোগী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আইন অনুযায়ী আমরা আগের মামলা নিষ্পত্তি করে আদালতকে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করি। এদিকে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করি। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, বলেন এসপি নাজমুল হাসান।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। এই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শুরুতে দায়ী না করলেও হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর থেকেই মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর ফলে সন্দেহের তীর যায় বাবুলের দিকে। হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।

ওই বছরের ৯ আগস্ট পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বাবুল আক্তার। নানা নাটকীয়তা শেষে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন