ঢাকা মহানগরী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন জরিপেও তার প্রমাণ মেলে। সেসব জরিপে ঢাকার অবস্থান সর্বনিম্নে গিয়ে ঠেকেছে। এই বসবাস অযোগ্যতার নানা কারণের মধ্যে দূষণ, জলাবদ্ধতা ও যানজট অন্যতম।
ড্রেনের উপচানো নোংরা পানি, ভাসমান আবর্জনার মধ্যে ডুবে থাকা রাস্তাগুলোও খানাখন্দে ভরা। ওদিকে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। খোঁড়া হয়েছে অনেক রাস্তা। বৃষ্টির পানি জমে আছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে। ঝুঁকি নিয়ে ওই সড়ক দিয়েই যেতে বাধ্য হচ্ছে পথচারীরা।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানার পর কয়েকটা দিন তীব্র যানজটের কবলে পড়ে রাজধানীবাসী। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অনেকেই ফ্লাইট মিস করেছে। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারেননি। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, একাধিক নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প চলমান থাকায় টঙ্গীর মিলগেট এলাকা থেকে চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দিলে সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যায় রাজধানীর বনানী ছাড়িয়ে মহাখালী পর্যন্ত। মিরপুর, মহাখালী, বনানী, বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িল এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। এই যানজটের বিরূপ প্রভাব পড়ে গুলিস্তান, পল্টন, ফার্মগেট এলাকায়ও। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, টঙ্গীর মিলগেটে চলছে উড়ালসেতুর গার্ডার বসানোর কাজ।
কয়েক জায়গায় খুঁটি বসানোর কাজও চলছে। সড়কের পাশে ড্রেনের কাজও চলছে। বিআরটি প্রকল্পের এই অংশের নির্মাণকাজের জন্য এক পাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্য পাশ দিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় যান চলাচল করছে। এতে কমে যাচ্ছে গাড়ির গতি, দীর্ঘ হচ্ছে যানজট। অন্য এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় হানিফ উড়ালসেতুর নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশের প্রায় আধাকিলোমিটার সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্যস্ত এই সড়কের এ অংশের পিচ-খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এসব খানাখন্দে জমে আছে পানি।
যানজটে নষ্ট হয় অতিরিক্ত সময়। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। পরিবেশদূষণের ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। যানজটে আটকা পড়ে সিগন্যাল থেকে বের হওয়ার পর দ্রুত গাড়ি চালানোতে জানমালের ক্ষতি হয়। যানজটে সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যায়।
নগরজীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই নানা ধরনের উন্নয়নকাজ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে কোথাও যেন নগরজীবন স্তব্ধ হয়ে না পড়ে সেটাও দেখতে হবে। নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়টাও যে বিবেচনায় নিতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজগুলো এমনভাবে করতে হবে, যাতে নাগরিক দুর্ভোগ যথাসাধ্য কমিয়ে আনা যায়। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপে রাজধানী যানজটমুক্ত হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।