ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত অপরাধের বীভৎসতা নজিরবিহীনভাবেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিবেকবান প্রত্যেক মানুষ এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছলে সেখান থেকে একদল ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে ওঠে।
বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণ দল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের বেঁধে ফেলে। কয়েক মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়। এরপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বাসটি রেখে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এ ঘটনার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেছেন এবং এই ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিলেন তা জানিয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীতে ধর্ষণের বিচারে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হওয়ার পর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়। ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হলেও ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত হত্যা কমেনি।
পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আমাদের সহনশীল সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে দিচ্ছে একের পর এক ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এ রকম অনেক খবর আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নিলেও তাতে অপরাধ থামছে না; বরং বেড়েই চলেছে। এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, সেই কারণগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা।
শুধু মৃত্যুদণ্ডের আইন হলেই হবে না। আইনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। টাঙ্গাইলে বাসে লুটপাট ও যাত্রী ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার করা হোক।