English

26 C
Dhaka
সোমবার, মে ৬, ২০২৪
- Advertisement -

চিকিৎসাসেবার নামে এসব কী চলছে: নল খুলে ফেলায় শিশুর মৃত্যু

- Advertisements -

রাজধানীর শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক গোলাম সরোয়ার সেখানে চিকিৎসাধীন যমজ দুটি শিশুর প্রতি যে আচরণ করেছেন, তা নির্মম ও নৃশংস। সামান্য মনুষ্যত্ববোধ আছে, এমন কোনো ব্যক্তি এ জঘন্য কাজ করতে পারেন না।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগা দুই শিশুকে তাদের মা ভর্তি করেছিলেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। দালালদের খপ্পরে পড়ে ২ জানুয়ারি তিনি শিশুদের সেখান থেকে নিয়ে ‘আমার বাংলাদেশ’ নামের হাসপাতালে ভর্তি করান। দালালেরা তাঁকে বলেছিলেন, সেখানে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা মিলবে। কিন্তু পাঁচ দিন পর ওই দুই শিশুর চিকিৎসা ব্যয় ধার্য করা হয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। গরিব মা এ অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য নেই জানালে গোলাম সরোয়ার চিকিৎসাধীন দুই শিশুর অক্সিজেনের নল খুলে ফেলেন। এর এক ঘণ্টার মধ্যে আহমেদ নামের শিশুটি মারা যায়। অন্য শিশুটি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

Advertisements

খবর থেকে আরও জানা যায়, গোলাম সরোয়ার আগে অতীতে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার দালালি করতেন। দালালি করে তিনি প্রচুর টাকার মালিক হন এবং অংশীদারদের সঙ্গে নতুন হাসপাতাল খুলে বসেন। ২০০০ সাল থেকে ছয়টি হাসপাতালের মালিক হন তিনি। কোনো হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এলে সেটি বন্ধ করে দিয়ে নতুন হাসপাতাল খুলে বসেন গোলাম সরোয়ার। আমার বাংলাদেশ তাঁর ষষ্ঠ হাসপাতাল।

শিশু আহমেদের মৃত্যু আইনের দৃষ্টিতে হত্যা ছাড়া কিছু নয়। এর আগে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক খণ্ডকালীন কর্মী চাহিদা অনুযায়ী বকশিশ না পেয়ে এক রোগীর মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলায় তিনি মারা যান। সেই মামলার শুনানিতে সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হেলালুর রহমান বলেছেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মুখ থেকে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে মাস্ক খুলে ফেললে এবং সেই কারণে রোগী মারা গেলে তা হত্যাকাণ্ড।’ আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক সরোয়ার ও তাঁর সহযোগীরা যা করেছেন, তা–ও হত্যাকাণ্ড।

Advertisements

এভাবে হাসপাতাল খুলে রোগী ভাগিয়ে আনা ও স্বজনদের প্রতি জুলুম অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কম খরচে উন্নত মানের চিকিৎসা দেওয়ার নাম করে যাঁরা শিশুটিকে মেরে ফেলেছেন, তঁাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা বাংলাদেশ হাসপাতালে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গোলাম সরোয়ার ধরা পড়লেও তাঁর অংশীদার ও সহযোগীরা ধরা পড়েননি।

দালালদের দিয়ে হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে আনার ঘটনা বেশ পুরোনো। ছোট-বড় প্রায় সব শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো যে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, তাদের বেশির ভাগই অধিক মুনাফার জন্য সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনছে। বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যেসব নির্দেশনা ও আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, তা–ও তঁারা মানছেন না।

এ অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপে কোনো কাজ হবে না। শিশু আহমেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে সন্তানহারা মাকেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, যদিও আমরা জানি, মানুষের জীবনের যে ক্ষতি, তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। চিকিৎসার নামে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের এ নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করতেই হবে।

Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন