English

33 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলা প্রচলনে অনাগ্রহ: ঔপনিবেশিক মানসিকতা দূর করা জরুরি

- Advertisements -
কোনো জাতিসত্তাকে ধ্বংস করতে হলে তার ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করো—এই আগ্রাসী ধারণা থেকে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হেনেছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সচেতন কিছু বাঙালি তাত্ক্ষণিকভাবেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন। অচিরেই তা তীব্র গণ-আন্দোলনের রূপ নেয়।
পাকিস্তানি শাসকরা আন্দোলন দমাতে বুলেট ব্যবহার করে। এবার সারা বাংলায় আগুন জ্বলে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতাসহ সব বড় অর্জন।’ কিন্তু সেই সব অর্জন রক্ষায় আমরা কতটুকু সচেতন। এখনো আমাদের আমলারা বাংলা লিখতে চান না। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া উচ্চ আদালতে বাংলা ব্যবহৃত হয় না। উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার না বেড়ে বরং দিন দিন কমছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সূচনা আমাদের থেকে হলেও দেশের অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি শুদ্ধ করে বাংলা ভাষা লেখায় ও বলায় আমাদের অনীহা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। তাহলে এই ভাষার জন্য আত্মদান, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা অর্জন সার্থকতা পাবে কেমন করে?

আঠারো শতকের কবি রামনিধি গুপ্ত জিজ্ঞাসার সুরে বলেছিলেন, ‘বিনে স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা।’ না, পুরে না। তা তিনি ভালো করেই জানতেন। জানতেন আরো বড় বড় মনীষী। আমাদের বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কুদরাত-এ-খুদাসহ আরো অনেক বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের জটিল বিষয়ে বাংলায় প্রবন্ধ লিখেছেন। বই লিখেছেন। চমৎকার তাঁদের রচনাশৈলী।

অথচ আজ অনেকেই বলেন, ‘আমি তো বাংলায় লিখতে পারি না।’ লজ্জায় তখন বলতে ইচ্ছা করে ‘ধরণি দ্বিধা হও।’ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলায় লেখাপড়া করে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে হোঁচট খায়। সেখানে ইংরেজিতে পড়াশোনা করতে হয়। ভাষার স্বাচ্ছন্দ্য না থাকায় বিষয়ও বোধগম্যতা হারায়।

ফলে সনদ অর্জন হয়, শিক্ষা এগোয় না। বলা হয়, বাংলায় পড়ানোর মতো বই নেই। রেফারেন্স বা তথ্যসূত্র বই নেই। কেন নেই? কজন শিক্ষক সাবলীল বাংলায় বই লেখার কাজে এগিয়ে এসেছেন? প্রকাশিত বই না হোক, ফটোকপি করে ছাত্রদের হাতে বাংলায় সহায়ক পাঠ্য তুলে দিয়েছেন কজন শিক্ষক? জার্মান, ফরাসি, চীনা, জাপানি, কোরিয়ানসহ আরো অনেক ভাষায় উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আমরা কেন স্বদেশি ভাষায় উচ্চশিক্ষার আয়োজন করতে পারছি না?

বঙ্গবন্ধুর কাছে মাতৃভাষার মর্যাদা ও প্রয়োজন স্পষ্ট ছিল। স্বাধীন দেশে শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জাতিসংঘেও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলায় বই রচনাকে তিনি উৎসাহিত করেছিলেন। বাংলা একাডেমি কিছু উদ্যোগও নিয়েছিল। তারপর সব কিছু থেমে গেছে। বিজ্ঞজনরা মনে করেন, বাংলার প্রচলনে প্রধান বাধা আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা, যা দূর করা জরুরি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আওয়ামী লীগের জনসভা কাল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন