English

24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

একটি রাষ্ট্রের মানুষের জন্য, মানুষের আবেগের জন্য নিরাপদ সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: ইলিয়াস কাঞ্চন

- Advertisements -

নিরাপদ সড়ক, সময়ের দাবি। বলা যায়-মানুষের অন্যতম অধিকার। কেননা, নিরাপদ সড়ক মানুষের জীবনকে নিরাপদ করে। অপমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। দেশের অর্থনীতিকে করে তোলে সমৃদ্ধশালী।  তাই মানুষের জীবনে নিরাপদ সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বিশ্বব্যাপী একটি অন্যতম প্রধান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জনস্বাস্থ্যগত সমস্যা। যদিও সব দেশেই কম-বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, তবু দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরার প্রচেষ্টাও চলছে অবিরাম। সড়ক-মহাসড়কে ঘটছে মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনা। এ প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনার। সড়ক দুর্ঘটনায় যিনি মারা যান, তার পরিবারকে বয়ে বেড়াতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণা। যাঁরা প্রাণে বেঁচে যান, পঙ্গুত্ব তাদের জীবনকে করে দুর্বিষহ।

প্রতি বছর ২২ অক্টোবর, নিরাপদ সড়ক দিবসটি পালন করা হয়। নতুন নতুন প্রতিপাদ্য বিষয় আসে, কিন্তু নিরাপদ হয়নি সড়কগুলো। দিন-দুপুরে কর্মক্ষম জনসম্পদ বা প্রাণগুলো হারিয়ে স্রেফ সংখ্যায় পরিণত হয়। আমাদের পরিসংখ্যানে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ মারা যায়। তবে জাতিসংঘের তথ্য আরও ভয়াবহ। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৪ হাজার ৯০০ মানুষ অপমৃত্যুর শিকার হন। অনেকেই বরণ করেন অভিশপ্ত পঙ্গুত্বজীবন। আর এ কারণেই নিরাপদ সড়ক গুরুত্বপূর্ণ।

নিরাপদ সড়ক মানুষকে সুশৃঙ্খল হতে সহায়তা করে। বাংলাদেশের সড়কে মানুষ যেভাবে উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলাচল করে, গাড়ি চালায়; তাতে নিজেরাও দুর্ঘটনার শিকার হন। অনেক সময় অন্যের জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ান। যে দেশে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা ও সড়ক দুর্ঘটনা যত কম সে দেশকে তত বেশি আধুনিক ও সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে মনে করা হয়। আমাদের দেশে যে পরিমাণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ যেভাবে সড়ক আইন অমান্য করে, কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই যেভাবে সড়কে গাড়ি চালায়, বিশ্বের খুব কম দেশেই এমন অনিয়মের দেখা মেলে। এ কারণেই আমাদের দেশে মৃত্যুর হার বেশি এবং এটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণও।

মানুষের মৃত্যুকে কখনো অর্থনীতি দিয়ে তুলনা করা যায় না, এর সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িত। যেমন আমার সন্তানরা মা হারিয়েছে। এ শূন্যতা আমি কী দিয়ে পূরণ করব? কেউই এ শূন্যতা পূরণ করতে পারবে না। ফলে একটি রাষ্ট্রের জন্য, একটি রাষ্ট্রের মানুষের জন্য, মানুষের আবেগের জন্য নিরাপদ সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যান্য দেশে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তারা নিরাপদ সড়ককে গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন। তারা প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করেন যেন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত না হন। বিশ্বজুড়ে এমন রাষ্ট্র রয়েছে, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৯০ শতাংশ কম, কোনো দেশ সে সংখ্যা শূন্য।

জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিহতে সবচেয়ে জরুরি সরকারের ইচ্ছা। এটি অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও রাজনীতিবিদদের ইচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। এর যথার্থ উদাহরণ বাংলাদেশেই আছে। সরকার পদ্মা সেতু তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংক টাকা দিতে গিয়েও দেয়নি। ফেরত চলে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাটা ছিল প্রবল, নানা বাধা সত্ত্বেও নিজস্ব অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতু সমগ্র বিশ্বে দৃশ্যমান। তাই বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের ইচ্ছা একটি বড় বিষয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকার সে ইচ্ছেটা রাখে। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মেয়ররা ঘোষণা দিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসবেন। সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করছেন। তাদের দেশের চালক, মালিক এবং সরকার; প্রত্যেকেই নিয়মে চলেন। একটা আইন করা হলে সে আইনটা মানার চেষ্টা করেন সবাই, এরকম বিরোধিতা কিন্তু তারা করেন না। তবে আশ্চর্য বিষয় হলো, বিদেশে আইন না মানার জন্য কোনো আন্দোলন হয় না।

দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমাদের দেশে আইন করলেই আন্দোলন হয়। আমাদের দেশ ও বিদেশের এটাই পার্থক্য। অন্যদিকে আমরা অনেক পরিশ্রম করে দীর্ঘ সময় পর একটা আইন নিয়ে এসেছিলাম, তারও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখনো নানা কৌশলে আইনটির বিরোধিতা করা হচ্ছে। যেন এ দেশে আইনটি বাস্তবায়ন না হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারও বিষয়টি নিয়ে উদাসীন। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় এমন অনৈতিক আপস নেই। আইন অমান্য করলে শাস্তি তাকে পেতেই হবে। সে যেই হোক না কেন। সম্প্রতি গাড়ি চালানোর সময়ে সিটবেল্ট না বাঁধার অপরাধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানা করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। অথচ আমাদের দেশে যারা ক্ষমতায়, তারাই আইনকে বেশি অমান্য করে। আইন অমান্য করাকে ক্ষমতার অধিকারী এবং ক্ষমতা প্রদর্শন হিসেবে মনে করে।

একজন সরকারি কর্মকর্তার অফিস তার ক্ষমতার স্থান। কিন্তু তার গাড়িতে কেন স্ট্যাম্প লাগাতে হবে? অনেক ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশও ভয় পায়। অনৈতিক কাজটি করে সেই কর্মকর্তার গাড়ি চালকও মজা নিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে ভালো জিনিসগুলো উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে সরকারি গাড়িগুলোয় আলাদা নম্বর প্লেট ছিল। যা দেখে বোঝা যেত যে গাড়িটি সরকারি। অর্থাৎ গাড়িটি সরকারি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি ব্যক্তিগত ঘোরাঘুরির জন্য ব্যবহার হচ্ছে। এই লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য এখন সাধারণ নম্বর প্লেট ব্যবহার শুরু হয়। সাধারণ নাম্বার প্লেট লাগিয়ে সাধারণের তালিকায় চলে এলেন ঠিকই, অথচ ডান্ডা লাগিয়েছেন। এমন দৃশ্য বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যাবে না। আমাদের দেশে অনিয়মের এমন অনেক উদাহরণ আছে যা অন্যান্য দেশের সঙ্গে পার্থক্য সৃষ্টি করে।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিহতে জাতিসংঘ যে পাঁচটা বিষয় উল্লেখ করেছে, সেগুলো কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমার সেগুলো কাজে লাগাতে পারছি না। সাংবাদিকরা মানুষের উপকারের জন্য সড়কের অনিয়মের কথা তুলে আনেন এবং প্রচার করেন। সরকারও সেটা দেখল এবং জানল। বুঝল অনিয়ম দূর করার প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার এই লেখা দেখে কোনো কাজ করে না। যখন তারা কাজটা করে না তখন আমরা মানুষকে সচেতন করি। পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজে গিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি, যদিও তা কার্যকরী হচ্ছে না। কার্যকর হতো তখনই যখন তারা সচেতনতার যথার্থ উদাহরণ দেখত। এ জন্য আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে। মানুষ যখন দেখবে, অন্যায় বন্ধে আইনের প্রয়োগ করা হচ্ছে তখন তারা নিজেরাই সচেতন হবে।  আমরা মানুষকে বলি, আইন অমান্য করলে অপমৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া শাস্তির বিধান তো আছেই! কিন্তু তারা যখন দেখে শাস্তি হয় না, ঘুষ দিলেই পার পাওয়া যায়, তখন সে কেন সচেতন হবে? সে কারণেই সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার।  তাই মুখ দিয়ে যা বলছেন, তা করে দেখাতে হবে, অন্যথায় এই দেখানো সচেতনতায় কোনো ফল আসবে না।

ইলিয়াস কাঞ্চন, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নিরাপদ সড়ক চাই

1 মন্তব্য

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
1 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শামীম ডিএস
শামীম ডিএস
1 year ago

বাংলাদেশে লোভী হিংসুক বেশি।

Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন