পানামার পাহাড়ি শহর বোকেতে কফি কেবল পানীয় নয়; এটি এক ধরনের শিল্প ও বিলাসিতার মিশ্রণ। এখানে উৎপাদিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি—গেইশা, যার প্রতি কেজি মূল্য ৩০,২০৪ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। শুধু স্বাদ নয়, এর উৎপাদন প্রক্রিয়া ও উৎসই এটিকে বিশেষ করে তুলেছে।
রেকর্ড ভাঙা কফি
এই বছর আন্তর্জাতিক ‘বেস্ট অব পানামা’ নিলামে বোকের হ্যাসিয়েন্ডা লা এসমেরালদা খামারের গেইশা কফি প্রতি কেজি ৩০,২০৪ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই খামার থেকে মাত্র ৬০ কেজি কফি বিক্রি করে আয় হয়েছে ১২ লাখ ডলারের বেশি। স্পেশালিটি কফি অ্যাসোসিয়েশন অব পানামার সভাপতি রিকার্ডো কয়না বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে, পানামার কফি আন্তর্জাতিক মানের।’
কফি শিল্পের সূচনা
পানামা কখনো বড় কফি উৎপাদক দেশ ছিল না। খরচ বেশি এবং চাষের এলাকা সীমিত। ১৯৮৯ সালে কয়েকজন সাহসী চাষি স্পেশালিটি কফি অ্যাসোসিয়েশন অব পানামা প্রতিষ্ঠা করেন এবং কফিকে বিলাসবহুল দ্রব্য হিসেবে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেন। ২০০৪ সালে হ্যাসিয়েন্ডা লা এসমেরালদা পরিবার প্রথমবার গেইশা জাতের কফি বাজারে আনে। তার সুবাস ও স্বাদ কফিপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
বোকেতে কফি এবং ভ্রমণ
বোকে শহরটি চিরিকুই প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে, কোস্টারিকার সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে। এখানে আছে বারু আগ্নেয়গিরি জাতীয় উদ্যান ও লস কেতসালেস ট্রেইল, যেখানে বিরল কেতসাল পাখি দেখা যায়। পাহাড়ি ঝরনা, সবুজ বন, শান্ত নদী ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে।
পুরোনো হোটেল: হোটেল পানামোন্তে ১৯১৪ সাল থেকে অভিজাত অতিথিদের আতিথেয়তা দিচ্ছে। রান্নাঘরে আছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শেফ চার্লি কলিন্স, যিনি পানামিয়ান খাবারকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন।
আধুনিক অভিজ্ঞতা: ফিঙ্কা পান্ডা হোটেলে ছোট কাঠের কটেজে বসে কফি বানানোর সব আয়োজন থাকে—গ্রাইন্ডার, কেটল, বিভিন্ন রোস্ট।
কফির উৎসে ভ্রমণ
প্রকৃত কফিপ্রেমীরা খামারে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। হ্যাসিয়েন্ডা লা এসমেরালদা খামার প্রতিবছর লা কোসেচা উৎসবে কয়েক দিনের জন্য খোলা থাকে। সেখানে টেস্টিং, শিক্ষা কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক শেফদের পপ-আপ রেস্টুরেন্ট থাকে। এলিদা কফি খামার চার প্রজন্ম ধরে কফি চাষ করছে। এখানে গাইডেড ট্যুর ও কফি টেস্টিং করা যায়।
কেন যাবেন বোকে?
- বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির স্বাদ নেওয়ার জন্য
- পাহাড়ি ঝরনা, সবুজ বন ও শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে
- স্থানীয় ঐতিহ্য ও কফি চাষের প্রক্রিয়া কাছ থেকে দেখতে
- বিলাসবহুল হোটেল ও আধুনিক কাঠের কটেজে থাকার অভিজ্ঞতা পেতে
- বোকেতে ভ্রমণ মানেই কফি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিলাসিতা একসঙ্গে উপভোগ করা।