একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপের তথ্য বলছে, গত তিন বছরে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা কমছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অনেক সময় তা মামলা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে সালিস করে অভিযোগ মীমাংসা করে দেওয়া হচ্ছে। এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে গত রবিবার। একই দিন প্রকাশিত আরেকটি খবর যেন এই খবরের সত্যতা প্রমাণ করছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় পরিচারিকার কাজ করছিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কিশোরী নিপা।
বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে দেখা না করার শর্তে প্রতি মাসে পরিবারের কাছে দুই হাজার করে টাকা পাঠিয়ে দিতেন ওই ব্যবসায়ী। গত পাঁচ দিন আগে বাবার কাছে তিন হাজার টাকা পাঠিয়ে বলা হয় দ্রুত ঢাকায় যেতে। দিনমজুর বাবা ঢাকায় গিয়ে মেয়েকে পেলেন একটি ক্লিনিকে। সেখানে বাড়িওয়ালাসহ বেশ কিছু লোক কিছু কাগজে সই নিয়ে মেয়েকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত শুক্রবার দুপুরে নিপার মৃত্যু হয়। নিপার বড় বোন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বাড়িতে আনার পর নিপার বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা দেখেছেন তিনি। বাড়িওয়ালার সহায়তায় একটি চক্র তাঁর বোনের কিডনি বা অন্য অঙ্গ রেখে দিয়েছে কি না তাঁদের সন্দেহ। শিশু নিপার লাশ দাফন শেষে তার মা-বাবা পল্লবী থানায় মামলার এজাহার করেছেন।
সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো একটার পর একটা শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে দেশে। সেসব ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পর কয়েকটি ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে। তার পরও থেমে নেই শিশু নির্যাতনের ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা অহরহই ঘটছে। সামান্য কারণে শিশুদের আঘাত করা হচ্ছে। সমাজও প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমাদের সমাজে শিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিলম্বিত বিচার। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করার দাবি দীর্ঘদিনের। এজাতীয় সব অপরাধের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আবার শুধু আইন দিয়ে, শাস্তি দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। এসব ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা, সমাজের ভূমিকা, রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার সময় এসেছে।
শিশু অধিকার নিয়ে বিধি-বিধান প্রণীত হয়েছে। আছে জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণাও। কিন্তু শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার যে চিত্র আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, তা কোনো সুস্থ সমাজের চিত্র নয়। আমরা চাই, রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার—সবাই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক। সমাজ থেকে নিষ্ঠুরতার অবসান হোক। শিশু নিপার মৃত্যু বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক।