English

38 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

বীর মুক্তিযোদ্ধা, সঙ্গীতশিল্পী আজম খান-এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

বীর মুক্তিযোদ্ধা, সঙ্গীতশিল্পী আজম খান-এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১১ সালের ৫ জুন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। প্রয়াত আজম খান-এর প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

আজম খান (মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান) ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার আজিমপুরে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সরকারি চাকিুরে, মা জোবেদা খাতুন। আজম খানরা তিন ভাই ও এক বোন । বড় ভাই সাইদ খান (সরকারি চাকরিজীবী), মেজো ভাই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলম খান, ছোট ভাই লিয়াকত আলী খান (মুক্তিযোদ্ধা) এবং ছোট বোন শামীমা আক্তার খানম।

আজম খান ১৯৫৫ সালে, প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তাঁর বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানালে, সেখানে বসতি হয় তাঁদের। কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাথমিক স্তরে এসে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন তিনি।

Advertisements

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেয়া শুরু করেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। কিছুদিন পর তাঁকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইন-চার্জ, আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। যুদ্ধে তিনি তাঁর বাম কানে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হন। যা পরবর্তীকালে তাঁর শ্রবণশক্তি লোপ পায়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে, তিনি তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ নামে একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন। সে সময়ে সঙ্গীতজগতে ব্যান্ড দল ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা পান আজম খান ও তাঁর দল।
১৯৮২ সালে ‘এক যুগ’ নামে তাঁর প্রথম অডিও অ্যালবামের ক্যাসেট প্রকাশিত হয় । ১৭টি একক, ডুয়েট ও মিশ্রসহ সব মিলিয়ে তাঁর গানের অ্যালবাম ২৫টি। তাঁর প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালে, ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়।

আজম খান-এর গানের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামের মধ্যে আছে- দিদি মা, বাংলাদেশ, কেউ নাই আমার, অনামিকা, কিছু চাওয়া, নীল নয়না, ইত্যাদি। মৃত্যুর পর ২০১১ সালে, ইমপ্রেস অডিও ভিশনের ব্যানারে ‘গুরু তোমায় সালাম’ নামে তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে…, চার কালেমা সাক্ষী দেবে…., রেললাইনের ঐ বস্তিতে…, ওরে সালেকা ওরে মালেকা…, আলাল দুলাল…, চুপ চুপ চুপ অনামিকা চুপ.., অভিমানী…, আসি আসি বলে…, বাংলাদেশ বাংলাদেশ…, ফেলে আসা দিনগুলো পিছু ডাকে…, কেউ নাই আমার…, ব্যস্ত ভবঘুরে…, আর গাইবো‌না গান…, থাকবো না যেদিন…, মাটির পৃথিবীতে…, নীল নয়না…, পাপড়ি কেন বোঝে না…., চাঁদকে ভালবেসো না…, হাইকোর্টের মাজারে…., গুরু তোমায় সালাম…, ইত্যাদি।

সংগীতের পাশাপাশি মিডিয়ার অন্যান্য শাখায়ও কাজ করেছেন আজম খান । একটি নাটক, একটি চলচ্চিত্র ও বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘হীরামন নাটক’ সিরিজের কালা বাউল পর্বে একজন ‘বাউল শিল্পীর’ চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে তিনি ‘গডফাদার’ নামক একটি বাংলা ছবিতে, নামভূমিকায় খলচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন।

আজম খান ‘গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবে’র পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন। তিনি ভালো সাঁতারু ছিলেন, নতুন সাঁতারুদেরকে সাঁতার শিখাতেন।

Advertisements

তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন, একুশে পদক- ২০১৯ (সংগীত বিভাগ, মরণোত্তর), ১৯৯৩ সালে-বেস্ট পপ সিঙ্গার অ্যাওয়ার্ড, কোকাকোলা গোল্ড বটল ২০০২ আজীবন সম্মাননা (হলিউড থেকে ডিসকো রেকর্ডিংয়ের সৌজন্যে) পুরস্কার, ২০০২ সালে-টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা (কাউন্সিল অব আরবান গেরিলা ঢাকা ’৭১ ও রেডিও টুডের পক্ষ থেকে) প্রভৃতি।

ব্যাক্তিজীবনে আজম খান ১৯৮১ সালে, সাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। প্রথম সন্তানের নাম ইমা খান, দ্বিতীয় সন্তান হৃদয় খান এবং তৃতীয় সন্তান অরণী খান। স্ত্রী সাহেদা বেগমর সাথে সেপারেশনের পর থেকে একাকী জীবনযাপন করতেন তিনি।

কন্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, বাংলা পপ ও রক সঙ্গীতজ্ঞ, অভিনেতা, ক্রিকেটার, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান।
বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক তিনি। কেউ কেউ তাঁকে পপসম্রাট বা গুরু হিসেবেও গণ্য করেন। তাঁর গানের বিশেষ, বিশেষত্ব ছিল, পশ্চিমা ধাঁচের পপসংগীতে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব স্টাইল ।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা পপসংগীতকে যে ক’জন সঙ্গীতশিল্পী পৌঁছে দিয়েছেন জনপ্রিয়তার ভিন্ন মাত্রায়, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আজম খান।
বাংলাদেশের সঙ্গীতে, শিল্প-সংস্কৃতিতে ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আজম খান-এর অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন