English

33 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা

- Advertisements -

আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। দেশটির উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রীর দেয়া এক চিঠিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই পদক্ষেপ বহাল থাকবে। এই ঘোষণা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ঘোষণায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় নারীদের প্রবেশাধিকারকে আরও সীমাবদ্ধ করা হয়। এর আগে নারীদেরকে বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাদ দেয়া হয়।

তিন মাস আগে আফগানিস্তানজুড়ে হাজার হাজার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছিল।
তবে তারা যে বিষয়গুলিতে পড়াশোনা করতে পারে তার উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

পশুচিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল, অর্থনীতি এবং কৃষিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং সাংবাদিকতায় পড়াশোনাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছিল।

গত বছর তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লিঙ্গভিত্তিক আলাদা শ্রেণীকক্ষ এবং প্রবেশপথ চালু করা হয়। নারী শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র নারী অধ্যাপক বা বয়স্ক পুরুষদের মাধ্যমে পাঠদানের নিয়ম করা হয়।

সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার পর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের একছাত্রী বিবিসিকে বলেন, তিনি মনে করেন তালেবানরা নারী ও তাদের ক্ষমতাকে ভয় পায়।

Advertisements

তিনি বলেন, “তারা একমাত্র সংযোগ সেতুটি ধ্বংস করেছে যা আমাকে আমার ভবিষ্যতের সাথে সংযুক্ত করতে পারতো। আমি কী আর বলবো? আমি বিশ্বাস করতাম যে, আমি পড়াশোনা করে আমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারব এবং আমার জীবনে আলো আনতে পারব। কিন্তু তারা তা ধ্বংস করে দিয়েছে।”

তালেবানদের ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের শিক্ষা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত বছর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী দেশটি থেকে প্রত্যাহারের পর প্রশিক্ষিত শিক্ষাবিদরা আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে।

অন্য একজন নারী বলছিলেন, তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর শুধু পড়াশোনা চালিয়ে নিতেই “অনেক অসুবিধার” মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।

তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন: “আমরা আমাদের ভাইদের সাথে লড়েছি, আমাদের বাবাদের সাথে লড়েছি, সমাজের সাথে এমনকি সরকারের সাথেও লড়াই করেছি। আমরা আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি।

“তখন অন্তত আমি খুশি ছিলাম যে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু, এখন আমি কীভাবে নিজেকে বোঝাবো?”

গত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানের অর্থনীতি মূলত বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু তালেবানরা মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি তুলে নেয়ার পর থেকে দাতা সংস্থাগুলি আংশিক বা কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে-শিক্ষা খাতে সাহায্য দেয়া বন্ধ করেছে। অনেক শিক্ষক যারা রয়ে গেছেন তারা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না।

সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার উন্নতিকে অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে নির্ধারণ করেছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড তালেবানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “তালেবানরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৈধ সদস্য হওয়ার আশা করতে পারে না যতক্ষণ না তারা সমস্ত আফগানদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে। বিশেষ করে মানবাধিকার এবং নারী ও মেয়েদের মৌলিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা।”

Advertisements

গত নভেম্বরে, কর্তৃপক্ষ রাজধানী কাবুলের পার্কে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তাদের দাবি, সেখানে ইসলামিক আইন মানা হচ্ছিলো না।

বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ইয়োগিতা লিমায়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ধারণা করা হচ্ছিলো যে, তালেবান সরকার নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করবে।

কয়েক সপ্তাহ আগে একজন নারী শিক্ষার্থী এমন ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন।

“একদিন আমরা ঘুম থেকে উঠে শুনবো যে, নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে,” তিনি বলেছিলেন।

যদিও অনেক আফগান হয়তো আশা করেছিল যে, দুদিন আগে আর পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তারপরও এটি এখনও একটি ধাক্কা।

গত মাসে নারীদের পার্ক, জিম এবং সুইমিং পুল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই বছরের মার্চ মাসে, তালেবান সরকার মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি।

গত এক বছরে তালেবান নেতাদের সাথে কথোপকথন থেকে এটা স্পষ্ট যে, মেয়েদের শিক্ষার ইস্যুতে তালেবানদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু তালেবান সদস্য বারবার বলেছে যে, তারা আশাবাদী এবং তারা মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

দুই সপ্তাহ আগেও আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের ৩১টিতে মেয়েরা মাধ্যমিক স্কুলের স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। যদিও তাদের এক বছরের বেশি সময় স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন