পৃথিবীতে সবুজ কমে যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তাই পৃথিবীব্যাপী সবুজায়নের নানা উদ্যোগ চলছে। আন্তর্জাতিক নানা ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও অনেক গালভরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবে কী হচ্ছে! প্রতিনিয়ত বনের পরিমাণ কমছে। প্রায় শতভাগ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বন ঘিরে গড়ে ওঠা করাতকলে দিনরাত কাঠ চেরাই করা হচ্ছে। বনের গাছ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গাছ কাটা হচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে চললে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল এবং তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকা নিষিদ্ধ। বাস্তবে বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বহু করাতকল ও ইটভাটা। কোথাও কোথাও বনের গা ঘেঁষে কিংবা কোথাও বনের জায়গা দখল করেও এসব গড়ে তুলতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, এসব ইটভাটা ও করাতকলের বেশির ভাগই হয় অবৈধ বা লাইসেন্সহীন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহজেই দায় এড়াতে পারে না।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেসব খবর অনুযায়ী, এর কোনোটিই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে ‘ম্যানেজ’ না করে চলতে পারে না। এসব কর্তৃপক্ষের নিয়মিত ‘চাঁদাবাজি’ একটি ওপেন সিক্রেট। এর ফলে সরকারও রাজস্ব হারায়। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকেও জানা যায়, বরগুনার বেতাগীতে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গড়ে উঠছে করাতকল। বর্তমানে উপজেলায় ৫৯টি করাতকল চালু আছে, যার মধ্যে বৈধ মাত্র ২৫টি আর অবৈধ ৩৪টি। অথচ বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া করাতকল গড়ে তোলার বিধান নেই।
শুধু বেতাগীতে নয়, সারা দেশেই চলছে করাতকলের অবৈধ ব্যবসা। এর আগে ভাওয়াল, মধুপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, শ্রীমঙ্গলসহ যেসব জায়গায় বনভূমি আছে, সেসব জায়গায় বনভূমির পাশে থাকা শত শত অবৈধ করাতকল নিয়েও অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সম্ভবত এখনো হবে না। এর আগে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২৩৮টি করাতকল রয়েছে, যার মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ৫৯টি করাতকলের। এগুলোও দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স নবায়ন করে না।
ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর লাইসেন্স ছাড়াই যদি ব্যবসা করা যায়, তাহলে অযথা খরচ করতে যাবে কে! কিন্তু লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রদানকারী কর্তৃপক্ষগুলোর দায়বদ্ধতা কোথায়?
প্রশাসনের এ ধরনের উদাসীনতা শুধু দেশকে বৃক্ষশূন্য করবে না, মানুষের টিকে থাকাকেই হুমকির মুখোমুখি করবে। অবিলম্বে অবৈধ করাতকল ও বৃক্ষনিধন বন্ধ করা হোক।